হুলোকে গারদে পুরেও শান্তি নেই!
গেরস্থের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল বলে পুলিশ তাকে ধরে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে। কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়? নেহাত অভ্যেসের বশেই জেলেও দাদাগিরি-তোলাবাজি করে ফেলছিল হুলো। তার জ্বালায় জেলের অন্য মানি-গুণীরা গরাদ ভেঙে পালাতে পারলে বাঁচে!
‘দাও ওকে আলিপুরে পাঠিয়ে’ রেগেমেগে নির্দেশ দিয়েছিলেন আইজি (কারা)। শুধু পালের গোদা নয়, তার সাঙ্গোপাঙ্গদেরও আলিপুর চালান করার অর্ডার হয়েছিল। কিন্তু তাদের বাড়ি তো বটেই, পাড়ারও প্রমীলাবাহিনী ‘যেতে নাহি দিব’ বলে শ্রীরামপুর জেলের সামনে এসে খাড়া! একে তো বাড়িছাড়া করেছে, এ বারে পাড়াছাড়া করবে? নেহি চলেগা!
এই নিয়েই বৃহস্পতিবার দিনভর নাটক চলল শ্রীরামপুরে। পুলিশের নিষেধ অগ্রাহ্য করে দফায়-দফায় টানা সাত ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখালেন অন্তত শ’দুয়েক মহিলা। তাঁদের সামাল দিতে মহিলা পুলিশ হিমশিম। শেষমেশ দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে হুলো-সহ চার দাগি দুষ্কৃতীকে প্রিজন ভ্যানে তুলে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জুলাইয়ের গোড়ায় গ্যাংটক থেকে হুলো ওরফে দীপু সিংহকে পাকড়াও করেছিল পুলিশ। মাথায় জোড়া খুনের মামলা। কিছু দিন থানা-আদালতের পরে হুগলির শ্রীরামপুর উপ- সংশোধনাগারে ঠাঁই হয়। সেই থেকে হুলো-বাহিনীর দাপটে অন্য বন্দিরা তটস্থ। তোলাবাজি, মারধর, নেশাভাঙ তো ছিলই। মোবাইল হাতে জেলের অন্দরেই ছোটখাটো ‘ডি-কোম্পানি’ খুলে বসে শ্রীরামপুরের মানিকতলা এলাকার এই তোলাবাজ-কাম-প্রোমোটার। কিছু জেলকর্মী এ হেন দাদাদের মদতও দেন। কিন্তু হুলো মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। |
জেল সুপার আবদুল্লা কালামের কথায়, “ওরা প্রভাব খাটিয়ে জেলের ভিতরে মদ আনিয়েছিল। অন্য আসামিদের উপরে অত্যাচার করত। পুরো বিষয়টি দফতরের কর্তাদের জানাই। তার পরেই আইজি (কারা) চার জনকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে সরানোর নির্দেশ দেন।” হুলো, জিমি পাসোয়ান, আশিস ভাজন ওরফে বান্টি এবং শুভ্র ব্রহ্ম নামে ওই চার মূর্তিমানের মধ্যে শুধু শুভ্রই হুলো-বাহিনীর পোষা মেনি নয়। সে রিষড়ার বাঘ। জেলের কুঠুরিতে বাঘে-বিড়ালে মিলেমিশে দিব্যি ক্ষীর খাচ্ছিল। সেই মৌরসী-পাট্টা ভেঙে দিলে কার না বুকে আঘাত বাজে! তাদের যে শ্রীরামপুরের নন্দনকানন থেকে বের করে আলিপুরের খাঁচায় (সেখানে রশিদ খান থেকে শুরু করে আফতাব আনসারি, কোন বাঘ-সিংহটা নেই!) পাঠানো হচ্ছে, সেই খবর ‘নেটওয়ার্ক’ মারফত হুলোপার্টির কানে এসে যায়।
অতঃপর হুলোরই ইঙ্গিতে সকাল-সকাল কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে শ’দুই মহিলা জেলের সামনে এসে রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেড করে ফেলেন। বক্তব্য আসামিদের ‘বেআইনি ভাবে’ অন্য জেলে পাঠানো হচ্ছে। বাড়ির লোককে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে তত ক্ষণে হুলো কোম্পানি থালা-গ্লাস বাজিয়ে হল্লাবোল জুড়ে দিয়েছে। থালা-গ্লাস ছুড়ে বানচাল করে দিয়েছে রান্নাবান্নাও। বাইরে অবশ্য বেলা গড়াতেই হাতে-হাতে চা চলে এল। খানিক বাদে দু’টো করে সিঙ্গাপুরী কলা। পুলিশ জোরাজুরি করতে চায়নি। শেষে শ্রীরামপুরের আইসি প্রিয়ব্রত বক্সী, উত্তরপাড়ার সিআই মনসুর মহম্মদ, রিষড়ার ওসি দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য এবং পুলিশ লাইন থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় চলে আসেন। আসেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবন্তী দাসও। লাঠি উঁচিয়ে প্রমীলা-বাহিনীকে তাড়া করে পুলিশ। ছুটে পালিয়ে, ফিরে এসে ভরদুপুরে চোর-পুলিশ খেলতে শুরু করেন মহিলারা।
এরই মধ্যে পুলিশ এক আসামির স্ত্রীকে সরানোর চেষ্টা করলে ধ্বস্তাধ্বস্তি বেধে যায়। ওই মহিলা আচমকা ব্লেড চালিয়ে দেন শেওড়াফুলি ফাঁড়ির ইন-চার্জ বর্ণালি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। খানিক বাদে চার জনকে আলিপুরের পথে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ এত সময় নিল কেন? এসডিপিও-র বক্তব্য, “পরিস্থিতি অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
হুলো তো গেল। জেলের পাড়া জুড়োল কি? |