বিপর্যয় মোকাবিলা করেও মেলে না বেতন
দুর্যোগে তড়িঘড়ি ডাক পড়ে তাঁদের। দিনরাত এক করে মোকাবিলা করতে হয় বিপর্যয়ের। কিন্তু জীবন কার্যত বাজি রেখে যাঁরা এই কাজ করেন, সেই স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্যদের হাতে ন্যূনতম পারিশ্রমিক তুলে দিতে পারছে না প্রশাসন। কী ভাবে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে, সে নিয়ে চিন্তায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দলের সদস্যদের মনোবল টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। সমাধান চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে আসানসোল মহকুমা প্রশাসন।
আসানসোলে একটি বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা অনেক দিন আগেই করেছিল রাজ্য সরকার। তৃণমূল পরিচালিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আসানসোলের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান একটি তিনতলা ভবনের শিলান্যাস করেন। ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের মুখে। মহকুমা প্রশাসন জানায়, এই ভবন থেকেই আসানসোল মহকুমার সর্বত্র বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ পরিচালনা হবে। আধুনিক সরঞ্জামও মজুত থাকবে। ‘কুইক অ্যাকশন টিম’ নামে একটি ১২০ জনের উদ্ধারকারী দল এখানে মোতায়েন থাকবে। বিপর্যয়ের খবর পাওয়া মাত্র এই দলের সদস্যেরা ঘটনাস্থলে যাবেন। এই কেন্দ্রটি চালু হবে আগামী এপ্রিল থেকে। কিন্তু উদ্ধারকারী দল গঠন থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বছরখানেক আগে থেকে। রাজ্যের অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের আসানসোল শাখার তত্ত্বাবধানে ১২০ জনের একটি বিপর্যয় মোকাবিলা দল কাজ করছে। এই দফতরের আধিকারিক তথা আসানসোলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রতন মজুমদার জানান, আসানসোলের চারটি ব্লক রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি, সালানপুর এবং চারটি পুরসভা আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া থেকে ৯০ জন তরুণ ও ৩০ জন তরুণীকে বাছাই করে এই দলে রাখা হয়েছে। তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ চলছে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের। ছবি: শৈলেন সরকার।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রতনবাবু জানান, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় প্রায়ই ধসের ঘটনা ঘটে। জলভর্তি পরিত্যক্ত খাদান বা খোলামুখ খাদানেও মানুষের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অতিবর্ষণে এলাকায় প্লাবন হচ্ছে, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে। এ সব পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের প্রয়োজন। এ ছাড়া মহকুমায় প্রচুর বহুতল রয়েছে। সেখানে যদি কোনও বিপর্যয় হয় তবে বাসিন্দাদের উদ্ধারেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
রতনবাবু জানান, সম্প্রতি অতিবর্ষণে আসানসোলে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা চাপা পড়ে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় দু’জন মারা যান, চার জন জখম হন। সে দিন রামকৃষ্ণ ডাঙ্গালেও একাধিক বাসিন্দাকে তাঁরা উদ্ধার করেন। জামুড়িয়া ও আসানসোলের ধাদকা এলাকায় জলভর্তি পরিত্যক্ত কয়লা ও পাথর খাদান থেকে ডুবে যাওয়া দেহও উদ্ধার করেন তাঁরা। সাঁকতোড়িয়ার ১২ নম্বর বস্তিতে মাটি ফেটে ভূগর্ভে ঢুকে যাওয়া হেনা পারভিনকে উদ্ধারের কাজেও ইসিএলের উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তাঁরা।
এ রকম আরও বহু ঘটনায় গত এক বছর ধরে দলের সদস্যেরা কাজ করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা উদ্ধারের কাজ করবেন তাঁদের প্রতি দিন ৩২৫ টাকা করে পাওয়ার কথা। কোনও সদস্য এক টানা ১৪ দিনের বেশি কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু এখানে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের কাউকেই এই টাকা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। দফতরের প্রধান তথা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রতনবাবু বলেন, “আমাদের অর্থের অভাব আছে। সরকার যে টাকা দিচ্ছে তাতে কুলোয় না। দলের সদস্যদের হাতে যদি কিছু করে টাকা দেওয়া না যায় তবে তাঁদের মনোবল ধরে রাখতে পারেব কি না জানি না।” তিনি আরও বলেন, “কাজের জায়গায় তাঁদের আমরা ন্যূনতম খাবারও দিতে পারছি না। সমস্যার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি।”
তবে টাকা না পেয়েও কাজের ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি নেই দলের সদস্যদের। টাকা না পেলেও কাজের জায়গায় গাফিলতি করা যাবে না বলে মনে করেন ওই দলের সদস্য অঞ্জনা মাজি, রনদীপ দাসেরা। দলের প্রশিক্ষক তথা অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের অফিসার সেবক নন্দী মজুমদার বলেন, “কাজের জায়গায় ডাকলেই ছুটে চলে আসে সদস্যেরা। প্রাপ্যটুকু নিয়মিত পেরে আরও ভাল ফল মিলবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.