|
|
|
|
পাহাড়ে মমতা |
ঝগড়া করুন, কিন্তু বাগড়া নয় উন্নয়নে
কিশোর সাহা • কার্শিয়াং |
রাজনৈতিক চোখ রাঙানি চলতেই পারে। তা বলে উন্নয়নের প্রশ্নে আপস? নৈব নৈব চ!
বুধবার কার্শিয়াঙে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে আগাগোড়া এই সুরই বেঁধে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নামোচ্চারণ না করেও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “আমার সঙ্গে যত খুশি ঝগড়াঝাঁটি করুন। কিন্তু দার্জিলিংকে শান্ত রাখুন। ঠান্ডা রাখুন। খুশি রাখুন।” তাঁর সতর্কবার্তা, দু’-চার মাস অন্তর নানা অছিলায় পাহাড়ের কাজ কর্ম থমকে দেওয়া চলবে না। ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, “কথায় কথায় কাজ কর্ম থমকে দেওয়া আমরা বরদাস্ত করব না।” |
লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার কার্শিয়াঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
যা শোনার পরে মোর্চা এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, নানা বিষয়ে মতান্তর থাকলেও অশান্তি না করে আলোচনার উপরেই তাঁরা জোর দিতে চান। সে জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কাল, শুক্রবার জিটিএ নিয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন বলেও জানান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন বার্তার পাল্টা কটূক্তি এত দিন শোনা যেত বিরোধী বামেদের মুখে। এ দিন অবশ্য সে পথে যাচ্ছেন না বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। দলীয় বৈঠকে এ দিনই শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, “গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার উচিত দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া। আমরা বারবারই বলেছি, আলোচনার পথেই সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। মোর্চা ও সরকার যদি আলোচনায় বসে, আমরা নিশ্চয়ই স্বাগত জানাব।”
মুখ্যমন্ত্রীর বারবার দার্জিলিং সফর পাহাড়-সমস্যা মেটাতে নয়, দলীয় স্বার্থে এর আগে এই অভিযোগ করেছেন বাম নেতারা। প্রশ্ন তুলেছেন, পাহাড় কি সত্যিই হাসছে? মোর্চার সঙ্গে সরকারের আলোচনার দাবি তুলে বিমানবাবু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্ররা সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার বলেছেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বই বেশি।
|
কার্শিয়াঙের অনুষ্ঠানমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছেন
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ
সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
জিটিএ সদস্যদের পুরনো মামলায় গ্রেফতারের সময় তাঁদের অভিযোগ ছিল, সরকার এই মনোভাব নিয়ে চললে আলোচনার পরিবেশই তৈরি হবে না। মোর্চাকেও বন্ধ ছাড়তে আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এখন পুরনো জটিলতা সরিয়ে রেখে আলোচনার দরজা খোলার আলো দেখা দেওয়ায় তাই সুর নরম করছেন বিমানবাবুরা।
রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে তাঁর প্রথম বার পাহাড় সফরের সময়ে যে উচ্ছ্বাস নজরে পড়েছিল, এ দিন তারই আভাস মিলেছে। সেই পথে পথে মেয়েরা মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁকে টিকা পরিয়েছে। এ দিন তাঁর অনুষ্ঠানেও শুধু লেপচা নয়, পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও হাজির হন।
তাঁরা সভার আগে ও পরে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গী তথা তৃণমূল নেতা ও সাংসদ মুকুল রায়, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে দেখা করেন। অনুষ্ঠানের সময় সে কথা নিজেই জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু লেপচারা নন, তামাঙ্গ, রাই, লিম্বু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। সকলেই পাহাড়কে ছন্দে রেখে উন্নয়নে গতি আনতে চান।” |
কার্শিয়াঙের এক স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: দেবাশিস ভট্টাচার্য। |
তৃণমূলের অন্দরের খবর, লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মোর্চা ও একাধিক বিরোধী দল পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির যে অভিযোগ তুলছে, এ দিন তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দার্জিলিঙের গৌরব যাতে উত্তরোত্তর বাড়ে, তা সকলে মিলে নিশ্চিত করতে হবে।” সেই সঙ্গে সম্প্রতি লাগাতার পাহাড় বন্ধের সময় লেপচা সম্প্রদায় তা উপেক্ষা করে যে ভাবে কালিম্পঙে সমাবেশ করেছেন, তা দৃষ্টান্তমূলক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেত্রী পাহাড়ের নেতা-কর্মীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, মোর্চা সুর নরম করে জিটিএ চালানোয় মন দিলেও পাহাড়ে তৃণমূল তার রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। কারণ, রাজনৈতিক ভাবে চাপ বাড়িয়ে মোর্চার হুটহাট ডেকে বসা বন্ধের রাজনীতিকে আটকে দেওয়া এবং অবশ্যই লোকসভা ভোটের আগে পাহাড়ে দলের শক্তি বৃদ্ধি।
|
মুখ্যমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি। বুধবার দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই। |
কার্শিয়াঙের মঞ্চ থেকে এ দিন পাহাড়ের লেপচা সম্প্রদায়ের এক হাজার বিপিএল পরিবারের মহিলাদের হাতে ঘর তৈরির জন্য দু’লক্ষ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর কালিম্পঙের সভায় লেপচা সম্প্রদায়ের ১০০ জন বেকার যুবক-যুবতীকে চাকরি দেওয়ার যে ঘোষণা করেছিলেন, সেই মতো ৪৫ জনকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন এ দিন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “নতুন দার্জিলিং গড়তে হবে। সেটা মাথায় রেখে এগোচ্ছি। পাহাড়ের সকলকে আমরা সঙ্গে চাই।”
এই অবস্থায় পায়ের তলায় জমি খুঁজতে আসরে নেমেছেন বিমল গুরুঙ্গও। তিনি এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, শীঘ্রই পাহাড় জুড়ে প্রচারে নামবেন তিনি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২৮ অক্টোবর কার্শিয়াং থেকে সভাপতির সফর শুরু হবে।” |
পুরনো খবর: পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী, উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে বৈঠক চান গুরুঙ্গরা |
|
|
|
|
|