মমতার সভায় সময়ে যায়নি দানের অ্যাম্বুল্যান্স, শো-কজ
শেষরক্ষা হল না!
তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে রওনা দেন কলকাতা পুরসভার সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পার্থসারথি দাস। বুধবার ভোরে শিলিগুড়িতে পৌঁছে দেখেন দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স এসেছে, একটি আসেনি। বাধ্য হয়ে দু’টি অ্যাম্বুুল্যান্সের গায়ে স্টিকার সেঁটে, কিছু লেখালেখি করে সেগুলি নিয়েই কার্শিয়াঙে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান স্থলে সটান পৌঁছন পার্থবাবু। তৃতীয় অ্যাম্বুল্যান্সটি যখন সেখানে পৌঁছয়, তত ক্ষণে সভা শুরু হয়ে গিয়েছে। এতে কলকাতা পুরসভার বদনাম হয়েছে এই অভিযোগে শো-কজ করা হচ্ছে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে। এ দিন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ এ কথা জানান। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পার্থসারথি দাস এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর ঠিক হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু তিনি যে সেখানে ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স দান করবেন, তা আগে জানতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। অ্যাম্বুল্যান্সগুলি কেনা হয়েছে তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়ের সাংসদ তহবিলের টাকায়। যে হেতু পুরসভাই ওই কাজের ‘নোডাল এজেন্সি’, তাই অ্যাম্বুল্যান্স কিনে শিলিগুড়ি পাঠানোর দায়িত্ব তাদেরই। এক পুর-কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় শিলিগুড়িতে পৌঁছন। ২১ অক্টোবর বিকেলের পরে জানতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী এই সফরেই ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স দান করবেন। সোমবার রাতেই গাড়ি সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ”
পুর-প্রশাসন জানতে পারে, প্রথম দফায় বুধবার কার্শিয়াংয়ের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ৩টি অ্যাম্বুল্যান্স দান করবেন। তড়িঘড়ি সেগুলোই প্রস্তুত করা হয়। মঙ্গলবার সকালে সেই ৩টি গাড়ি উত্তরবঙ্গ রওনা দেয়। রাস্তায় তদারকির জন্য পাঠানো হয় পার্থসারথিবাবুকে। এক পুর-কর্তা বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সগুলি রওনার পরেই খেয়াল হয়, সেগুলির গায়ে কিছু লেখা হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়, শিলিগুড়িতে পৌঁছে পার্থবাবু লিখিয়েয় নেবেন। গাড়িগুলি যে-হেতু পাহাড়ে চলবে, তাই সেগুলির গায়ে হিন্দি স্টিকারের নির্দেশ দেওয়া হয়।”
অ্যাম্বুল্যান্স তিনটি রওনা করিয়েও মঙ্গলবার দিনভর নিশ্চিন্ত হতে পারেনি পুর প্রশাসন। সেগুলি কত দূর পৌঁছল, জানার জন্য বার বার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হতে থাকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরসভায় খবর আসে, রাস্তার হাল খুবই খারাপ, গাড়ির গতি বাড়ানোই যাচ্ছে না। ঠিক হয়, বেশি রাতে শিলিগুড়ি পৌঁছলে পর দিন সকালে কার্শিয়াং যাবে অ্যাম্বুল্যান্স তিনটি। তৃতীয়টি না পৌঁছলেও এ দিন সকালে বাকি দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে স্টিকার সেঁটে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থল অভিমুখে রওনা হন পার্থবাবু।
পুরসভা সূত্রের খবর, সকাল ১০টার মধ্যেই সে দু’টি মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে পৌঁছয়। সেগুলি ফুল দিয়ে সাজিয়ে ডিএমের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হয়। তৃতীয় অ্যাম্বুল্যান্সটির চালক জানান, গাড়ির তেল ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই সময়ে পৌঁছয়নি সেটি। শেষমেষ বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এর জন্য পুর কর্তৃপক্ষ দায়ী করছেন পার্থসারথিবাবুকেই। এই বিলম্বকে ওই অফিসারের কর্তব্যে গাফিলতি বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ তাঁকেই পাঠানো হয়েছিল তদারকের জন্য। পুর কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় পার্থবাবুর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। এই জন্য বুধবার বিকেলেই তাঁকে শো-কজের সিদ্ধান্ত হয়ে যায়।
মাটিগাড়ায় এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বাকি ১৫টি অ্যাম্বুল্যান্স বিভিন্ন সংস্থার হাতে তুলে দেবেন। সেগুলির কয়েকটি শিলিগুড়ি পৌঁছেছে, কয়েকটি এখনও রাস্তায়। ফলে পুরকর্তাদের উদ্বেগ যায়নি। এ বার ঝুঁকি না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় অ্যাম্বুল্যান্স ঠিকঠাক পৌঁছনোর দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে এক জয়েন্ট মিউনিসিপ্যাল কমিশনারকে।
পুরকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, যাঁদের এ কাজ করার কথা ছিল, তাঁরাই জানতে পেরেছেন দেরিতে। ফলে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠলে তা বর্তায় পুর-প্রশাসনের উপরেই। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। রাস্তার যা অবস্থা তাতে এক ঘণ্টার পথ পেরোতে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে না দেখেই ওই ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.