শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ৭০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারের বিরুদ্ধে সমস্ত তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন ডিজি জেএমপি রেড্ডি এবং মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র। এসজেডিএ’র আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে তাঁরা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। সব শুনে মুখ্য সচিব এবং ডিজি এসজেডিএ’র ওই প্রাক্তন আধিকারিকের বিরুদ্ধে করা তদন্ত রিপোর্ট শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে জমা দিতে বলেছেন। ওই সরকারি আমলাকে গ্রেফতারের জন্য ইতিমধ্যেই দুই দফায় অনুমতি চেয়ে জিডি’র কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। যদিও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেছেন, “তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়।”
ইতিমধ্যেই গোদালা কিরণ কুমারকে শিলিগুড়িতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৭ অক্টোবরের পর তাঁকে ফের আরও এক দফা জেরা করা হবে।
মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি এবং বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়িতে তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ’র তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। চেয়ারম্যান পদ থেকে রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে ওই পদে বসানো হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এসজেডিএ’র তিন জন বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল এবং প্রবীণ কুমারকে গ্রেফতার করে। একাধিক ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার এবং কর্মী-সহ আরো ৬ জনকে গ্রেফতার করে। শিলিগুড়ি শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মান নিয়েও পরে অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করে ওই কাজ করা হলেও নিম্নমানের ক্যামেরা বসানো এবং ওই কাজের বরাত পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগে পুলিশে ঠিকাদার সংস্থার কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করলেও তিনি এখন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জাল নথি তৈরি করে টেন্ডারে উল্লেখ করা দরের চেয়ে কয়েক কোটি টাকা বেশিতে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি। ওই ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া বিষয়টি জানতে যে ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবস্থা রয়েছে তা এক মাত্র এসজেডিএ’র মুখ্যকার্য নির্বাহী আধিকারিকেরই জানার কথা। পুলিশ দুর্নীতির মামলায় ইতিমধ্যেই এসজেডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, এসজেডিএ’র বোর্ড সদস্য তথা কংগ্রেসের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করে। তবে এসজেডিএ’র প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতার না করায় বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ যাদের ধরেছেন তাদের আইনজীবীরাও আদালতে এসজেডিএ’র ওই প্রাক্তন সিইও’র গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। তাঁদের যুক্তি যা কিছু হয়েছে তা ওই আধিকারিকের অনুমোদনেই হয়েছে। অথচ পুলিশ তাঁকে ধরছে না। |