পথের দুঃখ
যশোহর রোডের খন্দ-চিত্রে খলনায়ক সেই বৃষ্টি
খাবি খেতে খেতে এ ভাবেই যাওয়া আসা। বুধবার, যশোহর রোডের বিরাটি মোড়ের কাছে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
বৃষ্টি হলে বিপদ, না হলে আরও বেশি বিপদ। বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট থেকে বারাসত পর্যন্ত বেহাল যশোহর রোড নিয়ে মানুষের ভোগান্তি দিনে দিনে বাড়ছে বই কমছে না।
রাস্তার পিচ, পাথর, ইট উঠে মাটি বেরিয়ে পড়েছিল যশোহর রোডের। পুজোর আগে ঢিবির মতো উঁচু অংশগুলি কেটে সেই পিচ-পাথর দিয়েই গর্ত বুজিয়েছিল পূর্ত দফতর। টানা বর্ষায় সেই পলেস্তারা উঠে গিয়েছে। ফের বেরিয়ে পড়েছে কঙ্কালসার চেহারা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বেহাল রাস্তার দায় স্বীকার করে নিয়ে পূর্ত দফতর জানিয়েছে, “পুজোর আগে যে কাজ হয়েছিল, তা উঠে গিয়ে এখন ফের পাথর বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজ করা যাচ্ছে না।” ফলে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যশোহর রোড।
যেমন দেখা গেল মঙ্গলবার। বৃষ্টি চলছে একনাগাড়ে। জলমগ্ন যশোহর রোডে কোনটা রাস্তা আর কোনটা গর্ত বুঝতে না পেরে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। এত সাবধানতা সত্ত্বেও হঠাৎ গর্তে পড়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে গাড়ি। বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছে এর মধ্যেই রাস্তা থেকে পিচ-পাথর তুলে অন্য পাশে রাখছেন পূর্ত দফতরের কর্মীরা। আড়াই নম্বর গেটের দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎই পিছলে পড়লেন এক জন। পাথরে আঘাত পেলেন। আবার নিজেই মোটরবাইক তুলে রওনা দিলেন। এলাকারই বাসিন্দা সমীরবরণ সাহার এই মোটরবাইক পিছলে পড়ার অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। সমীরবরণবাবু একাধিক বার পড়েছেন। মাঝেমধ্যেই অন্যরাও পড়ছেন।
এ তো হল বৃষ্টির দিনের অভিজ্ঞতা। স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, যখন বৃষ্টি হয় না, তখন রাস্তার গর্তে ধুলোয় চার দিক অন্ধকার হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে ধুলো এত বাড়ে যে একটু দূরের গাড়িও ঠিকমতো ঠাহর হয় না। রাস্তা খারাপ থাকায় বেশ কিছু রুটের বাস চলাচল কমে গিয়েছিল। রাস্তা সারানোর কাজ শুরু হওয়ায় বাসের সংখ্যা একটু বাড়ে। কিন্তু রাস্তা আগের চেহারায় ফিরে আসায় বাসচালকেরা উদ্বিগ্ন। বিরাটি-বাবুঘাট রুটের বাস কন্ডাক্টরের অভিযোগ, “গর্তে চাকা পড়ে টায়ারের দফারফা। মাঝেমধ্যেই বাস খারাপ হচ্ছে। ফলে অনেকেই ট্রেনে যাতায়াত করছেন। যাত্রীও হচ্ছে না।”
বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট থেকে বারাসত পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার পথে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা এক নম্বর থেকে বিরাটি মোড় পর্যন্ত। হাড়গোড় বেরোনো জলমগ্ন রাস্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনও উপায়ই নেই। আরও বিপজ্জনক অবস্থা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালপুলের সেই অংশ, যেখানে যশোহর রোডে এসে পড়ছে। ওই জায়গায় আগে যে বিশাল গর্ত ছিল, তা পুজোর আগে সারানো হয়। এখন সেই গর্ত প্রায় আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বসু বলেন, “উড়ালপুল থেকে গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে নামে। ওই গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে পরপর দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুজোর আগে রাস্তা সারানোর পরে আমরা অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ফের রাস্তার হাড়গোড় বেরিয়ে পড়বে ভাবতে পারিনি।”
কেন এই অবস্থা? জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাত থেকে এখন এই রাস্তাটির দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতর। কথা ছিল, প্রথম ধাপে রাস্তা সারাই করে আপাতত সামাল দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ওই ৯ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করে চার লেনের করা হবে। এ ব্যাপারে পূর্ত দফতরের (এনএইচ৫ ডিভিশন) এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উৎপল চৌধুরী বলেন, “আমরা কাজের সুযোগ পাচ্ছি না। অষ্টমী থেকে রোজই কখনও না কখনও বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের কর্মীরা বসে আছেন কাজ করবেন বলে। ৪৮ ঘণ্টা শুকনো পেলে আমরা রাস্তা অনেকটাই মেরামত করে দেব।”
পুজোর আগে রাস্তা সারানোর কাজ যেটুকু হয়েছিল, তার অবস্থা ফের কেন খারাপ? ওই এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, “রাস্তা সারানোর পরে দিন কয়েক আবহাওয়া শুকনো থাকা দরকার। বৃষ্টিতে তা হয়নি। ফলে বহু জায়গায় বিটুমিন ভেঙে গিয়েছে।” তাঁর আরও সংযোজন, “নিকাশির হাল খুব খারাপ বলেও রাস্তা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। নিকাশি সংস্কারেও হাত দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই চার লেনের কাজও শুরু হবে।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.