অবশেষে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বা যশোহর রোডের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অর্থ মঞ্জুর করল কেন্দ্রীয় সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রক। মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের কাছে একাধিক বার তদ্বির করার পরে বিমানবন্দর থেকে বারাসত ডাকবাংলো মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা এবং তার সৌন্দর্যায়নের জন্য ৬৩ কোটি ১৯ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র।
পূর্ত-সড়ক দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অর্থ মঞ্জুরি পাওয়ার পরেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওই ৭ কিলোমিটার অংশের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সড়কের ওই অংশটি চার লেন করা হবে। এক-একটি লেন হবে সাড়ে ১১ ফুট চওড়া। তা ছাড়াও, রাস্তার মাঝ বরাবর সৌন্দর্যায়নের কাজও শুরু হবে। রাস্তার দু’পাশে পথচারীদের জন্য প্রায় সাড়ে চার ফুট কংক্রিট করা হবে। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকা করে খরচ হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ত-সড়ক দফতরের কর্তারা। বর্ষাকালে জল জমে রাস্তার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। তাই যশোহর রোড চওড়া করার সময়ে নিকাশি ব্যবস্থার উপরেও জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা।
রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বৃহস্পতিবার মহাকরণে জানান, বছর শেষের আগেই যশোহর রোড সম্প্রসারণ শুরু করতে চায় রাজ্য। |
তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ ও উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে কলকাতার সংযোগ তৈরির জন্য যশোহর রোডের ওই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা অবস্থায় থাকায় মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। তাই সংস্কারের কাজে আর দেরি করতে চাই না।”
যশোহর রোডের ওই ৭ কিলোমিটার অংশ চওড়া করার জন্য জমি পাওয়া নিয়েও খুব একটা সমস্যা নেই বলে দাবি পূর্ত-সড়ক দফতরের কর্তাদের। এক কর্তার কথায়, “দোলতলার একটি অংশ ছাড়া বাকি এলাকায় রাস্তা
চওড়া করার জন্য যথেষ্ট জমি রয়েছে। জমির জন্য ওই প্রকল্পের কাজ আটকে থাকবে না।”
পূর্ত-সড়ক দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩-র মার্চেই যশোহর রোড মেরামতের কাজ শেষ করেছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। কিন্তু কয়েক মাসেই সেই রাস্তা ফের ভাঙতে শুরু করে। বর্ষার পরে রাস্তার ছাল-চামড়া উঠে কার্যত চাষের জমিতে পরিণত হয়। মাত্র ৭ কিমি রাস্তা যেতে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মহাকরণ সূত্রের খবর, এর পরেই কেন্দ্রীয় সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রক নড়েচড়ে বসে। শেষমেশ সাত কিমি রাস্তার মেরামতিতে অর্থ মঞ্জুর হয়।
পূর্তমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রথমত জীর্ণ যশোহর রোডকে পুজোর আগেই চলাচলের যোগ্য করে তুলতে চায় রাজ্য। সেই কাজ করতে ইতিমধ্যেই এনএইচএআই-এর সঙ্গে আলোচনা করেছে রাজ্য। এই প্রাথমিক কাজের জন্য এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। এর সঙ্গে আরও দু’কোটি টাকা যোগ করছে রাজ্য। পূর্তমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সাধারণের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। কিন্তু বর্ষার জন্য কাজ শুরু করতে পারছিলাম না। পুজোর আগেই আমরা এই মেরামতের কাজ শুরু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার পরে চলতি বছরের মধ্যেই ফের রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।” তিনি জানান, শুধু ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কই নয়, রাজ্যের যে সমস্ত সড়কের দায়িত্বে পূর্ত-সড়ক দফতর রয়েছে, পুজোর আগে সবগুলিরই হাল ফেরানোর জন্য চেষ্টা চলছে। |