দীর্ঘদিন ধরে যাঁদের ‘শ্রেণি শত্রু’ বলে চিহ্নিত করা হতো, তাঁদের বন্ধু করে ফেলার ফলেই গ্রাম হাতছাড়া হয়েছে বামেদের। পঞ্চায়েত ভোটের ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন।
সিপিআই রাজ্য নেতৃত্বের মতে, বামফ্রন্টের প্রথম দিকে ভূমি সংস্কারের ফলে গ্রামের যে ভূস্বামী, ধনী ও কায়েমি স্বার্থের মানুষরা ক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, পরবর্তী কালে তাঁরাই বামেদের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়ান। তাঁরা ব্রিগেডে বাস ভর্তি করে লোক আনার টাকা দিতেন। পার্টির সম্মেলন বা ভোটের প্রচারেও দেদার টাকা খরচ করতেন।
প্রতিদানে এই শ্রেণির লোকেরা পঞ্চায়েতে ঠিকাদারি পেতেন। শুধু তাই নয়, জেলা নেতাদের অনুগ্রহ, অর্থ ও পেশী বলের জোরে বহু জায়গাতেই এই শ্রেণির মানুষরা দলের নেতৃত্বেও চলে গিয়েছিলেন। ফলে গ্রামের গরিব মানুষ, কৃষক-ক্ষেতমজুর, যাঁরা বামেদের স্বাভাবিক মিত্র, তাঁরা ক্রমেই দূরে সরে গিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন বাম-বিরোধী শিবিরে। এঁদের ভোটে জিতেই তৃণমূল লোকসভা, বিধানসভার পরে এ বার পঞ্চায়েত ভোটেও সাফল্য পেয়েছে।
সিপিআই-এর রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের কথায়, “বামেদের শ্রেণি শত্রুরা শেষ পর্যন্ত মিত্রতে পরিণত হওয়ায় কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে সব বাম দলেরই। কিন্তু এর মধ্যে সিপিএমের ক্ষতি সব থেকে বেশি। কারণ, তারাই সব থেকে বড় পার্টি এবং অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা সমিতি ও জেলা পরিষদ কার্যত তারাই পরিচালনা করত।” সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব আরও মনে করেন, বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জয়ের ফলে এই কায়েমি স্বার্থের বড় অংশ আবার তৃণমূলের দিকে ফিরে গিয়েছে। বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি জেলার ফলেই তা স্পষ্ট। অন্য দিকে, গ্রামের গরিব মানুষ, যাঁরা বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের বড় অংশও এই মুহূর্তে তৃণমূলের সমর্থক। ফলে তৃতীয় থেকে সপ্তম বামফ্রন্টের জমানায় গ্রামাঞ্চলে বামেদের যে জনভিত্তি ও পেশী শক্তি ছিল, এখন তা তৃণমূলের দিকে গিয়েছে। আর তাতে ভর করেই বামেদের মতো জিতেছে তৃণমূল।
২০০৮-এ ১৩টি জেলা পরিষদ দখল করেছিল ফ্রন্ট। এ বার একই সংখ্যক জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। এই উদাহরণ তুলে সিপিআইয়ের এক রাজ্য নেতা বলেন, “আমরা সব বিশ্লেষণ করেছি। ২০০৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে ফ্রন্ট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রায় ৬ হাজার আসন জিতেছিল। এ বার তৃণমূল একই ভাবে সাড়ে ৬ হাজার আসন জিতেছে। তখন বামেরা বিনা প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় যেখানে জিতেছিল, এ বার তৃণমূল সেই সব জায়গাতেই জিতেছে।” উদাহরণ স্বরূপ এই নেতা উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, হুগলির আমারবাগ বা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার কথা তুলে ধরেন ওই সিপিআই নেতা। |