লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মিড ডে মিলেও। ছাত্রছাত্রীরা মাংসের স্বাদ ভুলতে বসেছে। মাঝেমধ্যে পাতে ডিম পড়লেও সেদ্ধর থেকে বেশি কিছু দেওয়া যাচ্ছে না। এক তরকারি আর ডালই এখন অধিকাংশ স্কুলে রোজকার মেনু। সঙ্কট কাটাতে জঙ্গলমহলের তিন জেলায় পড়ুয়াপিছু এক কেজি করে আলু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ২ সেপ্টেম্বর রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছে। আপাতত এক বারই আলু দেওয়া হবে। মিড ডে মিলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রকল্প আধিকারিক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে প্রতিটি স্কুলে উপযুক্ত মানের আলু পৌঁছে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলের তিনটি জেলা মিলিয়ে মাওবাদী উপদ্রুত ২৩টি ব্লকের ছাত্রছাত্রীরা এই আলু পাবে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও প্রাথমিকে (প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি) মিড ডে মিলের জন্য ছাত্রপিছু দিনে বরাদ্দ ছিল হত ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল ৪ টাকা ৬৫ পয়সা। গত জুলাই মাস থেকে তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ টাকা ৫১ পয়সা ও ৫ টাকা করা হয়েছে। বর্ধিত টাকা অবশ্য স্কুলগুলি এখনও হাতে পায়নি। এ দিকে, বাজার অগ্নিমূল্য। পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৫০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ১০ টাকা। আর যে কোনও সব্জি কিনতেই গড়ে কেজি প্রতি ১৮-২০ টাকা পড়ে যাচ্ছে। আগে স্কুলগুলি সাধারণত সপ্তাহে এক দিন ডিম, মাসে দু’দিন মিড ডে মিলে মাংস দিত। অন্য দিনগুলিতে ডাল-সব্জি-সয়াবিন পালা করে দেওয়া হত। এখন অবশ্য অন্য ছবি। মেদিনীপুর শহরের সুকান্ত স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ গোলাম কিবরিয়া বলেন, “মাংসের কথা ভুলেই গিয়েছি। এভাবে চললে হয়তো কোনও দিনই মাংস খাওয়াতে পারব না। জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে, তাতে সপ্তাহে একদিন ডিম দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে।” গ্রামীণ এলাকায় তবু সব্জি ও ডিমের দাম কিছুটা কম। শালবনির ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “মাংস আর দিতে পারব না। কারণ, মাংস হলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নয়, সবাইকেই খাওয়াতে হয়। মূল্যবৃদ্ধির চাপে মাংসের কথা ভুলেই গিয়েছি। তবে সপ্তাহে একদিন ডিম দিতে পারছি। ঝোল নয়, সেদ্ধ। আদা, পেঁয়াজের যা দাম!”
এই সমস্যা মেটাতেই জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে আলু দেওয়ার সিদ্ধান্ত। এর জন্য জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতরের প্রতিনিধিও আছেন। কারণ, গণবন্টন ব্যবস্থায় যে ভাবে রেশন দোকানে খাদ্যশস্য পৌঁছনো হয়, সেভাবেই আলু পৌঁছে দেওয়া হবে স্কুলে। আলুর গুণগত মান যাতে ঠিক থাকে, তা দেখতে বলা হয়েছে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে মিড ডে মিল খায় এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮২১ জন। তার জন্য ২৬৪৮.২১ কুইন্টাল আলু বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দরপত্র আহ্বান করা হয়ে গিয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর জানা যাবে কারা আলু সরবরাহের বরাত পাবে। তারপরই ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হবে। চলতি মাসের মধ্যেই যাতে সব স্কুলে আলু পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। |