|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রী যাবেন, ঢিবি চেঁছে পথ হল গর্তের সমান
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
শেষ পযন্ত এ পথ দিয়েই কি যাবেন মুখ্যমন্ত্রী? জানে না পূর্ত দফতর। তবে রাস্তা সারাইয়ের কাজ চলছে জোর কদমে!
কোথাও গাড্ডা তো কোথাও যেন টিলা রাস্তা বলতে এত দিন ছিল, চড়াই-উতরাই মিলে এক খেয়ালখুশির মানচিত্র। এত অগুনতি পেল্লায় গর্ত পিচ-পাথর দিয়ে চটজলদি বুজিয়ে ফেলা কঠিন। তাতে বাদ সেধেছে বৃষ্টিও। তাই তিন দিন ধরে গর্তের চার পাশের উঁচু রাস্তা চেঁছে গর্তের সমান নিচু করার কাজ চলছে। একটি বিশাল যন্ত্র সেই গর্তের চার পাশের
পিচ-পাথর কেটে তুলছে। ফেলছে রাস্তার পাশেই। ধুলোয় ধুলোময় চারপাশ। নজর চলে না ঠিক মতো। পথের মাঝে গর্তগুলো থেকে যাচ্ছে আগের মতোই। বৃষ্টির জলে সেগুলোর কোনটা কত গভীর ঠাওর হয় না।
অতি সাবধানে পাশ কাটিয়ে দুলতে দুলতে নৌকোর মতো পারাপার
করছে গাড়ি।
আজ, মঙ্গলবার বারাসতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বারাসত থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার যশোহর রোডের এই অভিনব সংস্কার চলছে জোর কদমে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বেহাল পড়ে থাকা রাস্তা কি তিন দিনে জনাকয়েক শ্রমিক লাগিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব? সোমবার দুপুরে এই পথে ঘণ্টা দুই যানজটে আটকে থাকা বিরক্ত যাত্রীরাও মুচকি হাসছিলেন রাস্তা সারাইয়ের এই চেষ্টা দেখে। |
|
তড়িঘড়ি অভিনব সারাই যশোহর রোডের। গর্তের চারপাশ থেকে
তুলে ফেলা হচ্ছে পিচের পলেস্তারা। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ। |
উঁচু অংশ কেটে গর্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার এই চেষ্টায় রাস্তা কিছুটা সমান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ক’দিন পরে এর হাল কী হবে, উঠেছে সে প্রশ্নও। খানাখন্দ ভরা পথে যেটুকু পিচ-পাথরও বা ছিল, জায়গায় জায়গায় সেটাও যে আর থাকছে না! এ ব্যাপারে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের বক্তব্য, “মাত্র কয়েক দিন আগে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই রাস্তার দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন। তার পরে দ্রুত টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু হয়েছে। যন্ত্রের সাহায্যে উঁচু অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য পিচ ভরাট করার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।” সোমবার সুদর্শনবাবু আরও বলেন, “বৃষ্টি না হলে সোমবার রাতের মধ্যে অনেকটা কাজ এগিয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী কোন পথে যাবেন তা তো তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তাই বিকল্প পথের কথাও ভেবে রাখতে হচ্ছে প্রশাসনকে। বি টি রোড দিয়ে সোদপুর-মধ্যমগ্রাম হয়ে কিংবা রাজারহাট-খড়িবাড়ি রোড ধরে বাদু-মধ্যমগ্রাম হয়েও তাঁকে বারাসতে আনার প্রস্তাব রয়েছে। কারণ, প্রথম জেলা সফরে এসে বারাসত থেকে মহাকরণে ফিরতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য দায়ী করেছিলেন বেহাল যশোহর রোডকে। তাঁর দ্বিতীয় জেলা সফরের সময় আগেভাগে এ পথে কিছুটা প্যাচওয়ার্ক করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী আসার দিন ট্রাক-বাস-সহ বেশ কিছু যানবাহনের জন্য বসানো হয় নো-এন্ট্রি বোর্ড। কিন্তু এ বার রাস্তার হাল এমনই যে বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলেছেন, “রাস্তা ঠিক না হলে বারাসতে আর আসব না।”
এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে তড়িঘড়ি সংস্কার। যার জন্য যশোহর রোড ধরে চলতে গিয়ে এখন মনে হবে, যেন কোনও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে চলেছি। এক দিকে, নর্দমা তৈরি হবে বলে গর্ত খুঁড়ে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে মাটি। অনেক টাকা খরচ করে মাত্র এক বছর আগেই বসানো হয়েছিল সৌন্দর্যায়নের ত্রিফলা বাতি। সেগুলি রাস্তার দু’পাশে চিৎপাত হয়ে পড়ে। তার পাশে ডাঁই করে ফেলা হচ্ছে রাস্তার ঢিবি কেটে তোলা পিচ-পাথর। আর চেঁছে ফেলা কঙ্কালসার পথের গর্তে জমে রয়েছে হঠাৎ বৃষ্টির জল।
সোমবার এই রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় দেখা গেল, এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটের কাছে চড়াই উতরাই রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। গোটা রাস্তায় দেখা মিলল না পূর্ত দফতরের কোনও ইঞ্জিনিয়ারের। মাইকেল নগর আর বাঁকড়া মোড়ের মধ্যে কেবল দেখা গেল, একটি যন্ত্রই রাস্তা থেকে পিচ-পাথর তুলে পাশে রাখছে। সেই কাজের দেখভাল করছিলেন ঠিকাদার আনারুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘‘রাস্তার উপরের পিচ-পাথর মাটির মতো নরম হয়ে গিয়েছে। একটু
খোঁচা দিলেই ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়ছে। আপাতত সেই পলেস্তারাই তুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু তাতে তো রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। রাস্তা সংস্কার হবে না? সে ব্যাপারে কিছু জানা নেই, জানালেন আনারুল।
বনগাঁ থেকে বারাসত পর্যন্ত যশোহর রোডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার কিন্তু বেশ ভালই। অথচ, বারাসত থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত মাত্র ৯ কিলোমিটার বেহাল রাস্তার জন্য গত দু’বছর ধরে নরক যন্ত্রণা ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা প্রচণ্ড যানজট। সময়ের হিসেব ভুলে প্রাণ হাতে নিয়ে এই পথে যাতায়াত করতে হয় হাজার-হাজার পড়ুয়া, অফিসযাত্রী এমনকী, বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে আসা বাংলাদেশি কিংবা বিমানবন্দরে নামা বিদেশিকেও।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে এই চেঁছে ফেলা রাস্তা কত দিন কী অবস্থায় পড়ে থাকবে, সেই চিন্তায় এখন নিত্যযাত্রীরা। |
|
|
|
|
|