পড়াশোনা করেছেন। বিএ, বিএস বা বিকম পাশও করেছেন। কিন্তু এখনও কম্পিউটার সম্বন্ধে তেমন কোনও ধারণা গড়ে ওঠেনি। অজানা থেকে গিয়েছে ইন্টারনেট, ই-মেল করার মতো বিষয়গুলো। চাকরি ক্ষেত্রে ডাক পেলেও ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে একাকার অবস্থা। এরকমটা যাতে না হয় তার জন্য প্রত্যন্ত এলাকার তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করল রাজ্য সরকারযার পোশাকি নাম, ‘পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’। ন্যূনতম স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির উপযুক্ত করে তোলা হবে এই কোর্সে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তফসিলি জাতি, উপজাতি বিত্ত নিগমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রাহুল নাথ। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার একটি সংস্থাকে এই প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে। শীঘ্রই প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাবে।”
রাজ্যের মোট ৮টি জেলাতে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, পুরুলিয়া, কলকাতা, দার্জিলিং, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর। প্রতিটি জেলাতেই এক বা একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৪টি মহকুমাতে ৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হবে। ইতিমধ্যেই আবেদনপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথমে সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আবেদনকারীর সংখ্যা কম হওয়ায় সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদনপত্র সংগ্রহের দিন বাড়ানো হয়। তারপরে আরও ৫ দিন বাড়িয়ে ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবেদনপত্র নেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি মহকুমাতে প্রায় ৫০০ জন আবেদন করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
কাদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ন্যূনতম স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রত্যেক আবেদনকারীকেই তফসিলি জাতি বা উপজাতির হতে হবে। বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকার বেশি যেন না হয়। বিপিএল পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার রয়েছে। অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন রয়েছে। যেখানে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। তিন মাস ধরে প্রশিক্ষণ হবে। সপ্তাহে তিন দিন, দিনে তিন ঘণ্টা। শেখানো হবে ইংরেজিতে কথা বলা, চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার আদব কায়দা, জীবনপঞ্জি লেখার পদ্ধতি, কম্পিউটার, ই-মেল, ইন্টারনেট ব্যবহার প্রভৃতি। প্রতিটি ক্লাসে ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এমনকী প্রশিক্ষণে হাজির থাকার জন্য ন্যূনতম স্টাইপেন্ডও দেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশিক্ষণ থেকে ক্যাম্পাসিংয়েরও ব্যবস্থা করা হবে। যাতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এই সব তফসিলি যুবক-যুবতীরা কাজের সুযোগ পান। পুজোর পর থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাবে। কত জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার কোনও উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয়নি রাজ্য সরকার। যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদেরই সুযোগ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা চাকরির বাজারে কোমর বেঁধে ময়দানে নামতে পারবে বলে আশা প্রশাসনের। আশায় তফসিলি যুবসমাজও। |