দলের সর্বস্তরে নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার বার্তা নিয়মিতই দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরা। এ বার দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও সেই বার্তা দিলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বাধীন দমকল কর্মী সংগঠনের বিজয়া সম্মিলনী ছিল বুধবার। সেই অনুষ্ঠানে শোভনদেববাবু স্পষ্ট বলেন, “আমাদের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জীবন ও কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। আগে কাজ করতে হবে। তার পরে ইউনিয়ন।”
কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতেই শোভনদেবের এই সতর্ক-বার্তা বলে সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শোভনদেববাবুও বলেন, “সরকারে আছি বলে ইদানীং কাজ না-করার প্রবণতা আমাদের কারও কারও মধ্যে লক্ষ করছি। তাই আগাম সতর্ক করেছি। কারণ, ইউনিয়ন করাটা কাজ না-করার লাইসেন্স হতে পারে না!” এই মর্মে কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বাধীন ইউনিয়নের নেতাদের চিঠিও পাঠাবেন শোভনদেব। তাঁর মতে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে যে উন্নয়নের কাজ করছেন, তা যাতে কোথাও ব্যাহত না হয়, সেই লক্ষ্যেই সকলকে সতর্ক করেছি।” বছর কুড়ি আগে কলকাতা পুরসভায় যখন বামফ্রন্ট ক্ষমতাসীন, সেই সময়েও শোভনদেব রীতিমতো পোস্টার দিয়ে প্রচার করেছিলেন— ‘সংগ্রাম আমাদের অধিকার। কাজ করাটা শ্রমিক-কর্মীদের দায়িত্ব’। সেই সময়ে ওই পোস্টার নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
শোভনদেবের সতর্ক-বার্তাকে স্বাগত জানান তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন। তাঁর মতে, “কাজ না-করার প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক করা ভাল ব্যাপার। কারণ সিপিএমের মতো প্রবণতা গড়ে ওঠা বাঞ্ছনীয় নয়!” তবে এখন রাজ্যে শ্রমিক-কর্মীদের কাজে অবহেলা নেই বলেই মনে করেন দোলা। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ধর্মঘটের কারণে গড়ে প্রতি বছর ৭৬ লক্ষ ৮০ হাজার শ্রম দিবস নষ্ট হয়েছে। তাঁর দাবি, “চলতি আর্থিক বছরে এ দিন পর্যন্ত শ্রমদিবস নষ্টের সংখ্যা শূন্য। এখন তো ধর্মঘট, বন্ধ, অবরোধ করে কর্মদিবস নষ্ট করতে দিই না!” তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা তাঁদের দিকে যে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, তাকে ‘অর্থহীন’ আখ্যা দিয়ে প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী তথা সিটু নেতা অনাদি সাহুর পাল্টা বক্তব্য, “শ্রমিকদের আগেও কাজ করতে হত, এখনও হয়। শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরির জন্যই বামফ্রন্ট সরকার শিল্পায়নের চেষ্টা করেছিল। তখন ওঁরা বাধা দিয়েছিলেন! আর শুধু শ্রমিকদের দোষে ধর্মঘট বা কাজ বন্ধ হয় না। কর্তৃপক্ষের দোষেও তাঁরা ওই পথে যেতে বাধ্য হন!” |