পুজোর মরসুম শুরুর আগেই এ বার হুগলিতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ফের যাতে না হয়, সে জন্য এ বার হুগলি জেলা প্রশাসন অতিরিক্তমাত্রায় সর্তক। তার উপরে শব্দ দূষণ ঠেকাতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিভিন্ন পুরসভার পক্ষ থেকেও উদ্যোগ করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “জেলার যে সব জায়গায় বাজি তৈরি হয়, মূলত সেই সব এলাকায় পুলিশের নজরদারি আছে। তল্লাশি চলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বাজি।” তবে জেলাবাসীর অনেকেই বলছেন, বছরভর কড়া নজরদারি না রাখলে শুধুমাত্র উৎসবের মরসুমে এসে বেআইনি বাজি কারখানার দৌরাত্ম্য ঠেকানো অসম্ভব।
চণ্ডীতলা বেগমপুর এলাকায় গত মাসে বাজি বিস্ফোরণে ২ শিশু-সহ মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় বাড়ির একাংশ উড়ে যায়। এরপরেই পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বস্তুত হুগলির ধনেখালি, চণ্ডীতলা, ডানকুনি এবং মগরার বেশকিছু এলাকায় বাজি তৈরির অতীত রয়েছে। ওই সব এলাকার ঘরে ঘরে বাজি তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাজির তৈরি ব্যবসায় যাঁরা জড়িত থাকেন, তাঁদের কোনও আইনি বৈধ্যতা থাকে না। কোনও ঘটনা না ঘটলে পুলিশি নজরদারিও সে ভাবে থাকে না।
আর পুলিশ প্রশাসনের অসর্তকতার সুযোগ নিয়েই একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাগামহীন ভাবে বাজি তৈরি করেন। কোনও রকম সর্তকতা অবলম্বন হয় না এ সব ছোট ছোট কারখানায়। ফলে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বাজি তৈরির কাজে বাড়ির মহিলা এবং শিশুদেরও কাজে লাগানো হয়। গত বছর হুগলির ধনেখালিতে বাজি কারখানায় বড়সড় বিস্ফোরণ হয়। শিশু ও মহিলা-সহ বেশ কিছু মানুষের প্রাণ যায় সেই ঘটনায়। জাঙ্গিপাড়ারও ইতিপূর্বে এ ধরনের দুর্ঘটনার সাক্ষী।
জেলার বিভিন্ন পুরসভার তরফেও আসন্ন কালীপুজো এবং ছট পুজোয় শব্দদূষণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চন্দননগর পুরসভার তরফে স্থানীয় ১৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকেই শব্দদূষণ প্রতিরোধে লিফলেট প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বছর কয়েক আগেই হুগলিতেই রাজ্যে প্রথম শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুর অঞ্চলে এক যুবক মারা যান। সেই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় পড়ে। শব্দবাজির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও বাজির উৎপাত রুখতে কঠোর আইন করে। তারপর থেকেই শব্দবাজি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও একেবারে বন্ধ করা যায়নি। |