ছাগল বাঁচাতে গিয়ে বুনো হায়নার মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন দুই মহিলা। লড়ে প্রাণে বাঁচলেও তাঁদের ভালই জখম করে হায়নাটি। পরে ক্ষিপ্ত জনতা হায়নাটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। ঘটনাটি বুধবার সকালের, আড়শা থানার শিরকাবাদের অদূরে গুড়াহাটা জঙ্গলের কাছে। জখম দুই মহিলাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বন দফতর ওই দুই মহিলার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার ডিএফও ওমপ্রকাশ। এ দিনই হায়নাটি ওই এলাকায় আরও কয়েক জনকে জখম করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। |
মৃত হায়না। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
এ দিন সকালে অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন শিরকাবাদের চাঁদ বাগদি ও ভঁদুরি বাগদি। লোকালয় পেরিয়ে জঙ্গলে ঢোকার মুখে তাঁরা হায়নাটির মুখোমুখি পড়ে যান। ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে হায়নাটি ছাগলগুলির দিকে তেড়ে যেতেই তাঁরা ছাগলগুলিকে সরিয়ে দেন। ভঁদুরিদেবীর কথায়, “তখনই লাকড়া (হায়না) চাঁদকে আক্রমণ করে। ওর হাত কামড়ে ধরে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও কামড়ে দেয়।” হায়নাটির সঙ্গে দুই মহিলার কয়েক মিনিট ধ্বস্তাধস্তি চলে। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হওয়ার আগেই হায়নাটি ফের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিরকাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল জানিয়েছেন, চাঁদ বাগদির বাঁ হাত থেকে বেশ খানিকটা মাংস খুবলে নিয়েছে ওই হায়না। তাঁর হাতের দু’টি হাড় ভেঙেছে। ভঁদুরিদেবীরও ডান হাত ভেঙেছে। চাঁদদেবীর অবস্থা খানিকটা আশঙ্কাজনক হলেও অন্য জনের অবস্থা স্থিতিশীল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে এ দিনই আরও কিছু গ্রামবাসী ও কয়েকটি গবাদি পশু ওই হায়নার আক্রমণের শিকার হন। শরৎ মাঝি নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “আমার পায়েও কামড়ে দিয়েছে। পরপর ঘটনাগুলি ঘটতে থাকায় চিতাবাঘ ঢুকে পড়েছে বলে এলাকায় রটে যায়। তার পরই ক্ষিপ্ত জনতা লাঠি-সোঁটা, বর্শা, জাল ইত্যাদি নিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে।” |
আহতের চিকিৎসা চলছে। —নিজস্ব চিত্র। |
ডিএফও ওমপ্রকাশ জানান, কিছু অজ্ঞাতপরিচয় লোক হায়নাটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এ জন্য বন দফতরের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হচ্ছে। আড়শার রেঞ্জার ভক্তরঞ্জন মাহাতো জানান, মৃত হায়নাটির দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ডোরাকাটা কালচে হলুদ রঙের হায়নাটির ওজন প্রায় ৭০ কেজি। লম্বায় ১ মিটারের কিছু বেশি। তবে, হায়নাটির দেহ থেকে নখ ও দাঁত কেউ বা কারা কেটে নিয়েছে। এই কাজ চোরাশিকারিদের কিনা খতিয়ে দেখছে বন দফতর। |