হুগলি
নিষিদ্ধ শব্দবাজির দাপট কমবে কি, প্রশ্ন
ঠিক এক বছর আগে, কালীপুজোর মুখেই ধনেখালিতে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে দুই মহিলা-সহ ছ’জনের মৃত্যু হয়। কয়েক বছর আগে চণ্ডীতলার কলাছড়ায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ যায় অন্তত চার জনের। মৃতদের মধ্যে শিশুও ছিল। বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে দেহগুলি তড়িঘড়ি কবর দিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেগুলি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। হুগলিই রাজ্যের প্রথম জেলা, যেখানে ১৯৯৭ সালে শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ‘শহিদ’ হয়েছিলেন দীপক দাস। অতীতের এই সব ঘটনা মাথায় রেখে হুগলি পুলিশ এ বার কালীপুজোর মুখে নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় সর্তক।
‘সর্তক’ হওয়ার কারণ আরও আছে। আরামবাগ মহকুমা-সহ চণ্ডীতলা, বেগমপুর, ধনেখালি, পোলবা, হরিপাল, ভদ্রেশ্বর, পান্ডুয়া প্রভৃতি ৮-১০টি থানা এলাকায় বাজি তৈরি হয়। কলকাতার কাছের এই জেলা থেকে শহরে প্রচুর বাজি সরবরাহ হয়। নিষিদ্ধ শব্দবাজিও তৈরি হচ্ছে ঢালাও। পুলিশ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চাপে বাজি তৈরির ধরনে ইদানীং অনেক পরিবর্তন এলেও চোরাগোপ্তা বেআইনি বাজি তৈরি ও ব্যবহারের প্রবণতা রয়েই গিয়েছে।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে। আটক করা হচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। মঙ্গলবার হরিপালের মালপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে পুলিশ তিন কুইন্ট্যাল বেআইনি বাজি আটক করে। ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া থেকে চল্লিশ কেজি বাজি আটক করা হয়। বাজি আটক করা হয় চণ্ডীতলা থেকেও। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “গত এক সপ্তাহে পুলিশি অভিযানে ১২৩৯ কিলোগ্রাম নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব থেকে বেশি বাজেয়াপ্ত হয়েছে চণ্ডীতলা এবং হরিপাল থেকে। কালীপুজোয় শব্দবাজি ফাটানো রুখতে পুলিশ সব রকম চেষ্টা করবে।”
নিজস্ব চিত্র।
হুগলির অনেক জায়গাতেই সারা বছর ধরে বাজি তৈরির কাজ চলে। কালীপুজোর কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। এই কয়েক মাস পুরুষ-মহিলা-শিশুরা এই সব কারখানায় স্বল্প মজুরিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। নিয়মমাফিক ন্যূনতম পরিকাঠামোর ধার ধারেন না অধিকাংশ বাজি কারবারীরা। অধিকাংশ কারখানার লাইসেন্স না থাকায় কোনও দুর্ঘটনার শিকার হলেও সরকারি সাহায্য মেলে না দরিদ্র শ্রমিক পরিবারগুলির।
পেয়ারাপুরের বাসিন্দা দীপক দাস ছিলেন রাজ্যের প্রথম ‘শব্দ শহিদ’। দীপকের খুনিরা অবশ্য আজও সাজা পায়নি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, দীপক খুন হওয়ার পর শব্দবাজি বন্ধ নিয়ে অনেক কথা শোনা গিয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের মুখে। কিন্তু কালীপুজোর মুখে বেআইনি বাজি আটক করে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও শব্দবাজি বন্ধ করা যায়নি।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং দূষণ পর্ষদের কড়া ব্যবস্থা যে আস্ফালন, কিছু দিন আগেই তা হরিপালে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এখানে প্রচুর লক্ষ্মীপুজো হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় তারস্বরে বাজানো হয় কয়েক’শো মাইক। মাইকের কানফাটানো আওয়াজে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে সেখানকার বড়বাজার-সহ সংলগ্ন এলাকার মানুষের। এ বার লক্ষ্মীপ্রতিমা বিসর্জনের আগে পুলিশের তরফে প্রচার চালানো হয়েছিল মাইক না বাজানোর আবেদন জানিয়ে। আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। যদিও, সাধারণ মানুষ বাস্তবে দেখলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় তারস্বরে মাইক বাজল। ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, রাস্তায় নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশকর্মীদেরও মাইকের চোখরাঙানি হজম করতে হল। পুলিশি তৎপরতা সত্ত্বেও শব্দবাজির ‘তাণ্ডব’ কোন পর্যায়ে পৌঁছয় তা জানতে কালীপুজো পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। অভিজ্ঞতা বলে, পুলিশের হাজার চোখ রাঙানি সত্ত্বেও পরিস্থিতি কিছুই বদলানোর নয়! উদ্ধার হওয়া বাজি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.