দীপাবলিতে শব্দবাজির তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পাশাপাশি এ বার নাগরিক উদ্যোগেও চলবে সমান্তরাল নজরদারি।
গত কয়েক বছর ধরেই কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি রোধে নজরদারি চালায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের অফিসারেরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে শব্দবিধি ভঙ্গের ঘটনা বা নির্দিষ্ট অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেন। সঙ্গে পুলিশের তৎপরতাও থাকে। অভিযোগ জানানোর জন্য থাকে বিশেষ ফোন নম্বর। তার পরেও ফি-বছর শব্দবাজির তাণ্ডবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে। রাজ্য পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা পুলিশ কড়া আইন হাতিয়ার করেও সেই তাণ্ডব বন্ধ করতে পারছে না।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে তাই এ বার এগিয়ে আসছেন নাগরিকেরাই। কলকাতা ও শহরতলির চল্লিশটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একজোট হয়ে গড়ে তুলেছে ‘সবুজ মঞ্চ’ নামে একটি শীর্ষ সংগঠন। সেই মঞ্চের তরফেই শব্দবাজির তাণ্ডব মোকাবিলায় নজরদারির এই সমান্তরাল উদ্যোগ। মঞ্চের পক্ষ থেকে নব দত্ত জানালেন, তাঁরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় গাড়ি নিয়ে নজরদারি চালাবেন। সঙ্গে থাকবে শব্দ মাপার যন্ত্র। কোথাও শব্দবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা দেখলে বা অভিযোগ পেলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে তা পর্ষদের আধিকারিক এবং পুলিশকে জানিয়ে দেবেন। সরকারি নজরদারি সত্ত্বেও সমান্তরাল এই নাগরিক উদ্যোগকে কী চোখে দেখছে রাজ্য সরকার? |
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “সবাই মিলে একটা শুভ উদ্যোগে সামিল হলে আপত্তির কিছু নেই। আমরাও চাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের শব্দতাণ্ডব মোকাবিলায় রাজ্যের উদ্যোগে সামিল করতে।” নব দত্ত বলেন, “সরকারি নজরদারিতে যে সব জায়গায় খামতি রয়েছে, আমরা চেষ্টা করব সেখানে সাহায্য করতে। আমরাও দুটো ফোন নম্বর দেব, যাতে সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন।” পরিবেশমন্ত্রী তাঁদের এই উদ্যোগকে মান্যতা দেওয়ায় তার গুরুত্ব অনেকেটাই বাড়ল বলে মনে করছেন মঞ্চের সদস্যেরা।
শব্দবাজি কতটা নিয়ন্ত্রণ করা গেল, কত অভিযোগ পাওয়া গেল এবং তার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা জানিয়ে কালীপুজোর পরে একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। নববাবু জানালেন, তাঁরাও একটা রিপোর্ট তৈরি করবেন। তাঁদের ধারণা, এর ফলে প্রকৃত অবস্থাটা আরও পরিষ্কার ভাবে জানা সম্ভব হবে। তাঁরা মনে করেন, এই ধরনের কাজে নাগরিক সমাজেরও একটা ভূমিকা আছে। সেটা অবশ্যই পালন করতে হবে। শব্দের তাণ্ডব বন্ধের এই নাগরিক উদ্যোগে সামিল হয়েছেন শব্দবাজির মোকাবিলায় এক সময়ে হাইকোর্ট নিয়োজিত স্পেশাল অফিসার, আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাজ্য শব্দ নজরদারি কমিটির সদস্য, ইএনটি চিকিৎসক দুলাল বসু।
তবে, পরিবেশমন্ত্রী মনে করেন, শব্দবাজির তাণ্ডব বন্ধে রাজ্য প্রশাসন যথেষ্ট কাজ করছে। সুদর্শনবাবু বলেন, “আমরা চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছি বলে অনেকে ভাবছেন কিছুই করছি না। এটা ঠিক নয়। পুলিশ ও প্রশাসন গোপনে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। আমি একশো ভাগ নিশ্চিত যে, গত বছরের তুলনায় এ বছর শব্দবাজির উপদ্রব অনেক কমবে। যতটা আশা করেছিলাম, এ বছর তার চেয়েও ভাল কাজ করছে পুলিশ-প্রশাসন।” মন্ত্রী জানান, কেবল বাজির গুদাম নয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট দোকানেও অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। সুদর্শনবাবু মনে করেন, এই অভিযানের ফলে ত্রস্ত ব্যবসায়ীরা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি বন্ধ করবেন। |