পুরপ্রধান স্বরূপ, হুইপে স্তব্ধ প্রতিদ্বন্দ্বীরা
লের নির্দেশ অমান্য করে গুসকরায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বানচাল করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজ্য নেতৃত্ব। বুধবার বর্ধমানের পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা নিয়ে তাই রীতিমতো সতর্ক ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সমর্থকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটলেও পুরপ্রধানের নাম ঘোষণার পরে দলীয় নির্দেশ মেনে নিয়েছেন কাউন্সিলরেরা। তবে স্বরূপ দত্তকে পুরপ্রধান পদে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত কি না, সে ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি গোষ্ঠী রাজনীতিতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
এ দিন স্পন্দন মাঠে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময়েই সমীর রায়কে পুরপ্রধান পদে বসানোর দাবিতে সোচ্চার হন বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। পুরসভার রুদ্ধদ্বার কক্ষে যখন মুখবন্ধ খাম খুলে পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা হচ্ছে, তখনও বাইরে উপস্থিত জনতার একাংশ সেই দাবি জানিয়ে চলেছে। স্বরূপবাবুকে পুরপ্রধান করার খবর জানার পরেই উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে নামতে হয় পুলিশকে। পুলিশ লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর আনন্দ রায়ের দাবি, “আমি তো পুলিশকে লাঠি চালাতে দেখিনি।”
পুরপ্রধান নির্বাচন শেষে পুরসভার দলনেতা শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের কাছে রাজ্য নেতৃত্ব থেকে পাঠানো খাম আসে। তাতে পুরপ্রধান হিসেবে স্বরূপবাবুর নাম ছিল। সভায় তাঁর নাম প্রস্তাব করেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শক্তিরঞ্জন মণ্ডল। তা সমর্থন করেন ২৬ নম্বরের কাউন্সিলর খন্দোকার মহম্মদ শহিদুল্লাহ। এর পরেই সর্বসম্মতিতে চেয়ারম্যান হন স্বরূপবাবু।”
পুরপ্রধান হওয়ার পরে অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্বরূপ দত্ত। ছবি: উদিত সিংহ।
স্বরূপবাবুকে পুরপ্রধান করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত কি না, সে প্রশ্নে অবশ্য বিশেষ মুখ খুলতে নারাজ দলের অনেক কাউন্সিলরই। বৈঠক সেরে বেরোনোর সময়ে বর্ষীয়ান নেতা তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরেশ সরকার বলেন, “এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।” ৩১ নম্বরের কাউন্সিলার রত্না রায়ের বক্তব্য, “দল যা বলেছে, তাতে সম্মতি দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।” ৩ নম্বরের কাউন্সিলর সেলিম খান বৈঠক থেকে বেরোনোর সময়ে আবার বলে গেলেন, “দলের হুইপ! কিছু করার নেই।”
যাঁকে পুরপ্রধান করার দাবিতে এ দিন বিক্ষোভ করলেন অনুগামীরা, সেই সমীর রায় বলছেন, “যা দেখার আপনারা দেখেছেন। আর কী বলব!” ২৬ নম্বরের কাউন্সিলার খন্দেকার মহম্মদ সাহেদুল্লাহের বক্তব্য, “দলের নির্দেশ মানতেই হবে। তবে আমাদের দল গণতান্ত্রিক। তাই ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতেই পারে।” পুরপ্রধান হওয়ার পরে সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে স্বরূপবাবু বলেন, “মূলত চারটি নীতির উপরে পুরসভা চলবে। প্রথমটি, সেবা। পরিষেবার মধ্যে কৃতিত্বের গন্ধ থাকে। কিম্তু সেবা নিঃস্বাথর্। দ্বিতীয়, সততা। তৃতীয়, স্বচ্ছতা ও চতুর্থ, মমতার সঙ্গে কাজ করা।”
শপথগ্রহণ বানচালের ঘটনার পরে গুসকরার পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান বাছতে ২৮ অক্টোবর দলের ১১ জন কাউন্সিলরকে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অলোক দাস। তিনি বলেন, “সে দিন ১১ জনকে নিয়ে বসবেন মুকুল রায়। সেই বৈঠকেই গুসকরা নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত সবিস্তারে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
দলের এই সিদ্ধান্তে তাদেরই সুবিধা হবে বলে দাবি করেছে গুসকরায় তৃণমূলের প্রায় সব গোষ্ঠীই। প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা এ বারের জয়ী কাউন্সিলর চঞ্চল গড়াই বুধবার বলেন, “যা ঘটল তার পরে তো মনে হচ্ছে আমারই ফের পুরপ্রধান হওয়ার সম্ভাবনা। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁরা বোকা।” প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদার পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান হিসেবে পাঠানো নাম না মানার কথা বলে সভাস্থল ছেড়েছিলেন মঙ্গলবার। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কাউন্সিলরদের সামনে কলকাতা থেকে আসা যে খাম আনা হয়েছিল, তার মুখ খোলা ছিল। তাই দলের সিদ্ধান্ত না মানার প্রশ্ন উঠছে না। বরং ওই খাম নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে। তিনি এ দিন বলেন, “যারা ওই জালিয়াতিতে জড়িত দল তাদের নিশ্চয় সাজা দেবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অন্যায় হতে দেবেন না।”
গুসকরার ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় আবার দাবি, “দলের শীর্ষ স্তরের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, রাজ্য নেতৃত্ব পুরপ্রধান হিসেবে বুর্ধেন্দু রায়ের নাম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কী করে গীতারানি ঘোষের নাম উঠে এল, তা তাঁরাও বুঝতে পারছেন না। ২৮ তারিখেই এই ঘটনার কিনারা হবে বলে আমার ধারণা।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.