উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার যে ব্যবসায়ীরা বাস, ট্যাক্সি বা অটোর পারমিট পেতে আগ্রহী, কলকাতায় গিয়ে তাঁদের হয়রানি ঠেকাতে শিলিগুড়িতেই পরিবহণ দফতরের জোনাল অফিস খোলার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-ভানু মঞ্চে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। তবে, বাণিজ্যিক গাড়ির লাইসেন্স প্রাপকদের সামনে একটি শর্ত রাখার জন্যও প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শর্ত হল, কোনও বনধ বা ধর্মঘটের অছিলায় ওই ট্যাক্সি-বাস-অটো চালানো বন্ধ করা যাবে না। |
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গে পর্যটনের প্রসার ঘটছে। আরও বাস-ট্যাক্সি দরকার। কিন্তু, এখানকার আবেদনকারীদের লাইসেন্স পেতে কলকাতায় ছুটতে হয়। নানা সমস্যা হয়। সে জন্য আমি শিলিগুড়িতে পরিবহণ দফতরের একটি জোনাল অফিস খোলার নির্দেশ দিয়েছি। যেখান থেকে সরাসরি বাণিজ্যিক গাড়ি চালানোর লাইসেন্স মিলবে। যত শীঘ্রই সম্ভব ওই অফিস খোলা হবে।” এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, “লাইসেন্স পাওয়ার পরে বন্ধ, ধর্মঘটের সময়ে গাড়ি ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না। তা হলে প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলও করে দেওয়া হবে।” এই বিষয়টি নির্দেশে উল্লেখ রাখার জন্যও অফিসারদের বলেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও শর্ত নিয়ে কিছুটা ধন্দে উত্তরবঙ্গের পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট ওনার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “বন্ধ, ধমর্ঘটের বিষয়টি নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ, আমরা নিজেরা সাধারণত বন্ধ, ধর্মঘটে যেতে চাই না। তাতে আমাদেরই লোকসান হয়। অন্য কোনও বন্ধ, ধর্মঘটে গাড়ি চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ যাতে থাকে, সেটাও রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তাঘাট ভাল রাখতে হবে।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজি সহ প্রথম সারির কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও ছিলেন। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজ, অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্তদের শংসাপত্র বিলিতে ঢিলেমির কড়া সমালোচনা করেন। বিশেষত, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিঙে ১০০ দিনের কাজে গতি আনার নির্দেশ দেন। সাম্প্রতিক অতীতে দার্জিলিং পাহাড় ১০০ দিনের কাজে দেশের মধ্যে সেরা হলেও এখন কেন পিছিয়ে পড়েছে, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। |
তাঁর নিজের হাতে থাকা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের নানা এলাকার দুঃস্থ শিল্পীদের তালিকা তৈরি করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে না বলেও ক্ষোভ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে একাধিক ব্যাপারে তাঁর কাছে অভিযোগ পৌঁছচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। যেমন, তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে রাজ্যের বাইরে চলে যেতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। সে জন্য প্রশাসনিক তদন্তও হচ্ছে বলে তিনি জানান। পুলিশকেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
|
মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |