মাঠে এসো। চুপচাপ কাজ করো। করে বাড়ি চলে যাও।
লিয়েন্ডার পেজ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখো। বিশ্বাস করো, যদি চল্লিশে লিয়েন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে, তা হলে ছাব্বিশে তুমি অন্তত একটা রঞ্জি জিততে পারবে।
অশোক মলহোত্র-র এনার্জিটা নাও। রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ওই ‘খুনে’ প্রাণশক্তিটা খুব দরকার। সঙ্গে চাই শেখার ইচ্ছে। সমাজের প্রচলিত শ্রমিকশ্রেণির লোকজনের থেকেও যদি কিছু শেখার থাকে, দু’বার ভেবো না।
বাংলা অধিনায়ক হিসেবে মঙ্গলবার থেকে তাঁর ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ শুরু হয়ে গেল। গত দু’এক বছরের মতো ছুটকো-ছাটকা ভাবে নয়, পুরো মরসুমের জন্য। এবং অধিনায়কের সিংহাসনে প্রত্যাবর্তনের দিনে লক্ষ্মীরতন শুক্ল পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, আসন্ন রঞ্জিতে উপরোক্ত তিন টোটকাই তাঁর রঞ্জি জয়ের মন্ত্র! জানিয়ে দিলেন, বাংলার বাকি দশের থেকে ঠিক ওই জিনিসগুলোই তিনি চান।
ঘটনা হচ্ছে, বঙ্গ অধিনায়কের কথাগুলো যতটা আশাব্যঞ্জক শোনাবে, তাঁকে অধিায়ক ঘোষণার প্রেক্ষাপটকে সম্ভবত ততটা গৌরবের মনে হবে না। সিএবি কম টালবাহানা করেনি লক্ষ্মীকে অধিনায়ক ঘোষণা করা নিয়ে। ঋদ্ধিমান সাহাকে প্রথমে ক্যাপ্টেন ভাবা হয়েছিল, বলা হয়েছিল সিএবি আর পিছনে ফিরে তাকাতে চায় না। ঋদ্ধির সঙ্গে একপ্রস্ত কথাবার্তাও হয়ে যায় সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার। কিন্তু বঙ্গজ উইকেটকিপারের কিছু শর্ত পছন্দ হয়নি সিএবি-র। অতএব—আবার লক্ষ্মীরতন শুক্ল। অতএব—আবার অতীতের এক অধিনায়কের কাছে ফিরে যাওয়া।
দেখে অবাক লাগছে না?
“দেখুন, আমাকে নিয়ে কে কী বলেছে জানি না। সিএবি-র সবার সঙ্গে আমার দশ-এগারো বছরের সম্পর্ক। কাগজে অনেক কিছু দেখেছি, পড়েছি। কিন্তু প্রভাবিত হইনি,” মঙ্গলবার সন্ধেয় বলছিলেন লক্ষ্মী। একটু থেমে পরবর্তী সংযোজন, “তবে অবাক আমি নই। কারণ আমি অত আশা করি না। শুধু একটা কথা জানি। আজও যখন ক্রিকেট কিট নিয়ে বেরোই, বাংলাকে জেতাতে বেরোই। কে ক্যাপ্টেন হল না হল, কিছু এসে যায় না আমার।”
কিন্তু এই যে প্রকারান্তরে ঋদ্ধির বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া হল? গত এক মাসে ফোনে ‘তুমি প্রায় ক্যাপ্টেন হয়ে গিয়েছ’ কথাটা তো কম শুনতে হয়নি। অথচ সরকারি ঘোষণাটাই হচ্ছিল না। সিএবি ঠিক করেছিল, একই সঙ্গে ক্যাপ্টেন ও টিম বুধবার ঘোষণা করা হবে। নির্বাচক প্রধান দীপ দাশগুপ্তর-র উদ্যোগে যা পাল্টালো শেষ পর্যন্ত।
কিন্তু তাতেও বা লাভ হল কতটা? বরোদার বিরুদ্ধে নামতে বাকি আর পাঁচ দিন। এই ক’দিনে তৈরি হওয়া কতটা সম্ভব? ময়দানে তাঁর বিখ্যাত ওভার বাউন্ডারিগুলোর মতোই এ বার উড়ে এল উত্তর—“বললাম তো, সিএবি-র প্রশাসনিক ব্যাপারে আমি ঢুকব না। ক্ষমতা থাকলে এই পাঁচ দিনেও সব সম্ভব। আর ঋদ্ধির সঙ্গে সম্পর্ক? আমি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কোনও ইগো নিয়ে বেরোই না। মনোজ, ঋদ্ধিকে কী ইগো দেখাব? এত দিন ধরে খেলছি। আজ যদি আমার জায়গায় ঋদ্ধি ক্যাপ্টেন হত, ঠিক ততটাই খুশি হতাম যতটা নিজের জন্য হচ্ছি,” বলে দিলেন লক্ষ্মী। এবং সেকেন্ডের ভগ্নাংশে আবার, “যাঁরা আমার সঙ্গে ঋদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে এত চিন্তিত তাঁদের বলি যে, ঋদ্ধিকে ক্যাপ্টেন্সি নেওয়ার জন্য জোরাজুরিও করেছিলাম। বলেছিলাম, এখন নিবি না তো কবে নিবি?”
সিএবি-র কেউ কেউ পরে বলছিলেন, লক্ষ্মীকে শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন করে এক দিক থেকে ভালই হল। কারণ, কড়া প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর বুকের খাঁচা। এবং কোচের সঙ্গে তাঁর গাঢ় রসায়ন। শুনে বাংলা অধিনায়ক হাসেন। “আমি আর পাজি, দু’জনেই আসলে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। যুক্তির চেয়ে আবেগটা আমাদের বেশি চলে।” আর আবেগটা বেশি চলে বলেই বোধহয় রঞ্জি মরসুমে মনোজ তিওয়ারির অনুপস্থিতি নিয়ে, “ওকে মিস করব খুব’’ বলে দেওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সব ভুলে বরোদা নিয়ে হুঙ্কার ছাড়তে পারেন—‘ছিড়ে ফেলব!’ অক্লেশে বলে দিতে পারেন, “ক্যাপ্টেন্সি আশেপাশে পড়ে ছিল, পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু আবার পেয়েছি যখন রঞ্জি জেতার জন্য জীবন দিয়ে দেব!”
এই না হলে ‘এলআরএস’! |