কেউ সচিবের ঘরে ঢুকে পড়ছেন সচিন তেন্ডুলকরের অয়েল পেন্টিং নিয়ে। দেখেশুনে একটা পছন্দ এবং মুহূর্তে অর্ডার‘এটাই সিএবিতে ঝুলিয়ে যান।’
পাঁচ দিনের টিকিটে সচিনের পাঁচ রকম মুখ বসেছে। কিন্তু তার উপর লেখাটাই আবার স্পষ্ট নয়। দেখে এক সিএবি কর্তা টিকিট প্রস্তুতকারকদের একজনকে রীতিমতো খেঁকিয়ে উঠলেন, “আর কত বলতে হবে? এটুকু আপনারা দেখে নিতে পারেন না?”
সচিন নিয়ে মূল অনুষ্ঠানের ব্যাপারস্যাপার ঠিক করে ফেলতে হবে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে। যা হয়েছে, সব খসড়া। সিএবি অফিসে ডাঁই করে পড়ে লিটল মাস্টারের নানা রকম মুখোশ, ঠিক করতে হবে যে কোনও একটা। মাঝে পুলিশকে সময় দিতে হচ্ছে, নিয়ম করে বৈঠক করতে হচ্ছে ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গেও।
শুধু বাংলা ক্রিকেটটা নিয়ে ভাবার কোথাও বিশেষ সময় নেই।
একমাস বা দিন পনেরো নয়, ঠিক ছ’দিন পর রঞ্জি ট্রফির যুদ্ধে নেমে পড়ছে বাংলা। তার আগে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দু’টো প্রশ্ন কী হওয়া উচিত?
খুব সহজ। এ বারের অধিনায়ক কে? ২৭ অক্টোবর থেকে বরোদার বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলার টিমটা কী?
উত্তরটাও সহজ কেউ জানে না! |
ক্রিকেটাররা বিরক্ত। নির্বাচকদের কেউ কেউ অসন্তুষ্ট। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ সিএবি কর্তাদের ঢিলেমি দেখে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এবং কারণ খোঁজ করতে গিয়ে আশ্চর্য সব যোগাযোগের অভাব বেরিয়ে পড়ছে।
সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছেন, “এটা সিনিয়র ক্রিকেটের সচিব দেখবেন। আমি এ সবে নেই।” সিনিয়র ক্রিকেটের সচিব সুজন মুখোপাধ্যায় অকপটে জানাচ্ছেন, নির্বাচক প্রধান দীপ দাশগুপ্ত কোচিতে দলীপ ফাইনালের কমেন্ট্রি করতে ব্যস্ত। তাই ইচ্ছে থাকলেও নাকি আগামী ২৩ অক্টোবরের আগে প্রথম ম্যাচের দল নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, নির্বাচক প্রধান শহরে ঢুকবেন নাকি সে দিন সকালে। সচিবের স্পষ্ট যুক্তি, “চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছাড়া টিম করলে তখন আপনারাই আবার নানা প্রশ্ন তুলবেন।” অবাক ব্যাপার হচ্ছে সচিব জানেনই না যে, দীপ বুধবার নয়, ফিরছেন মঙ্গলবার ভোরে! কারণ, দলীপ ফাইনালটাই বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছে।
অধিনায়ক নির্বাচন নিয়েও প্রবল গয়ংগচ্ছ মনোভাব। নির্বাচকরা বলে দিচ্ছেন, বাংলার অধিনায়ক নিয়ে তাঁরা কাকে চান, সেটা অন্তত পনেরো-কুড়ি দিন আগে সিএবি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নামটালক্ষ্মীরতন শুক্ল। পুজোর মধ্যে হরিয়ানার প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার সময়ও নাকি বারবার নির্বাচক এবং কোচ অশোক মলহোত্র-র পক্ষ থেকে সিএবি সচিবকে বলা হয়, আপনি এ বার টিমটা করে ফেলুন। ক্যাপ্টেন কে, ঘোষণা করে দিন। এ-ও বলা হয়, অজিত আগরকর অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি মুম্বই রোহিত শর্মাকে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করে দিতে পারে, তা হলে সিএবি এত দেরি করছে কেন?
আতঙ্কিত অবস্থায় পড়ে এ দিন টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে সিএবি ইন্ডোরে বৈঠকের জন্য উপস্থিত হয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে ফেলা হয়, দীপের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিয়ে বরোদা ম্যাচের টিম এবং ক্যাপ্টেন চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। কিন্তু সেটাও শেষ পর্যন্ত হয়নি। তিতিবিরক্ত এক বাংলা ক্রিকেটার বলে দিলেন, “সিএবি পুরোপুরি এখন সাসপেন্স থ্রিলার হয়ে গিয়েছে। কী হবে, কেউ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে পারবে না। অশোক পাজি ছিলেন বলে, আমরা ম্যাচ পেলাম। অনূর্ধ্ব-২৫-এ কোনও অশোক মলহোত্র নেই, তাই ওরা একটাও প্র্যাকটিস ম্যাচ পায়নি!”
কেন অধিনায়ক ঘোষণা নিয়ে এমন টালবাহানা? সুজন বলছিলেন, “প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঋদ্ধিমানের কথা হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একবার কথা বলতে হবে। কোচ-নির্বাচক প্রধানের সঙ্গেও কাল কথা বলব। তার পর বুধবার আগে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করব। তার পর টিম।”
মানেটা সোজা। বুধবার দুপুর দু’টোয় টিম হবে, তার আগে অধিনায়ক ঘোষণাও হবে। শুধু প্রথম দল নির্বাচনী বৈঠকে বাংলা ক্যাপ্টেন থাকতে পারবেন না!
|