|
|
|
|
জল নামলেও পচছে ধান-সব্জি
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
জল নেমে গিয়েছে। কিন্তু রেখে গিয়েছে ক্ষতচিহ্ন। এক দিকে প্রবল বৃষ্টি, অন্য দিকে জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে দাঁতন ও কেশিয়াড়িতে ক্ষতির মুখে ধান ও সব্জি চাষ। জলমগ্ন জমিতে গোড়া পচে নষ্ট হয়েছে ধান গাছ। ক্ষতি হয়েছে সব্জিরও। ফলে চরম সমস্যার মুখে চাষিরা। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জমি চিহ্নিতকরণের কাজও শেষের পথে। তাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা।
প্রবল নিম্নচাপে নবমী থেকে টানা বৃষ্টি ও ঝাড়খণ্ডের গালুডি থেকে ছাড়া জলে ভেসে গিয়েছিল সুবণর্র্রেখা তীরবর্তী কেশিয়াড়ি ও দাঁতন ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কেশিয়াড়ির বাঘাস্তি ও নছিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, দাঁতনের আঙ্গুয়া, তররুই, ৯ নম্বর দাঁতন-২ সহ প্রায় ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত জলমগ্ন হয়। এখন জল নেমে গিয়েছে। কিন্তু জলমগ্ন থাকার দরুন মাঠের ফসল মাঠেই পচেছে। ধার-দেনা করে অথবা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে অনেকেই চাষ করেছিলেন। এখন ফসল না ওঠায় মাথায় হাত চাষিদের। এই পরিস্থিতিতে সরকারি অনুদানের দাবি তুলেছেন তাঁরা। অবশ্য কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া চাষিদের বিমা থাকলে টাকা ফেরত পাওয়া যেতে পারে। দাঁতনের আঙ্গুয়ার জামবৌনিয়ার গকুল চন্দ বলেন, “আট বিঘে জমিতে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্বর্ণধান চাষ করেছিলাম। এখন বিমার চেষ্টা করব, তবে তা সময় সাপেক্ষ। ততদিন সরকার কিছুটা সাহায্য করলে ভাল হয়।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দাঁতন ব্লকের ৭০টি মৌজায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চারশো হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। বাকীদের মতো সরকারি সাহায্যের আশায় রয়েছেন দাঁতনের পানিপুনিয়ার পূর্ণচন্দ্র রাউত, কুঞ্জবাগাড়ের সুশান্ত কাপরি, বড়বাগাড়ের সুধাংশু দাসের মতো ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরাও। ব্লক কৃষি আধিকারিক কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা নেই। আমরা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত জমি চিহ্নিত করেছি।” দাঁতন ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিক্রম প্রধান বলেন, “দলীয় মন্ত্রী-সাংসদরা এলাকা ঘুরে যাওয়ার পরে মানুষ আশ্বস্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীও ব্যাঙ্কগুলিকে চাষের ঋণ সহজ কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন করেছেন।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, কেশিয়াড়ি ব্লকে ২৮টি মৌজায় মোট তিন হাজার হেক্টর চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সব্জি চাষের জমি ৪০০ হেক্টর। ওই এলাকায় জলে ডুবে আখ চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্লক কৃষি আধিকারিক ভীমচরণ হেমব্রম বলেন, “প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনও সরকারি ক্ষতিপূরণের কোনও নির্দেশ নেই। কিছুদিন আগে দফতরের তরফে গম, সর্ষে জাতীয় বীজের মিনিকিট দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছি যাতে সেই মিনিকিট অন্তত দেওয়া যায়।” কেশিয়াড়ির নছিপুরের হরিপুরার চাষি দীপক বেরার কথায়, “ধার করে ও নিজের টাকায় মোট এক বিঘা জমিতে আখ ও ধান চাষ করেছিলাম। সব জলে চলে গেল। কী ভাবে লোকের টাকা ফেরত দেব জানি না। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সরকারি খাতায় নাম নথিভুক্ত করতে পেরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা জেগেছে।” তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কিছু সাহায্য করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি। সমিতির সহ-সভাপতি অশোক রাউত বলেন, “এখন তো অন্য কিছু চাষ হবে না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কিছু তৈলবীজ দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।”
|
পুরনো খবর: জমা জলে পচছে ধানের গোড়া, ক্ষতি সব্জিরও |
|
|
|
|
|