|
|
|
|
জমা জলে পচছে ধানের গোড়া, ক্ষতি সব্জিরও |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা আর চাষে বিপুল ক্ষতি, দুই মেদিনীপুরে এই ছবি প্রতি বছরের। এ বছর ধান, সব্জি, ফুলচাষের ক্ষতির বহর আরও বেড়েছে। নাগাড়ে বৃষ্টির ফলে জমিতে জল জমেছিল আগেই। পরে জলাধারের ছাড়া জলে ঘাটাল-সহ জেলার নানা এলাকায় বিস্তীর্ণ চাষজমি বেশ কয়েক দিন ধরে জলের তলায় রয়েছে। স্বভাবতই মাথায় হাত ছোট-বড় সব ধরনের চাষির।
জেলার মধ্যে ঘাটাল মহকুমায়, বিশেষ করে দাসপুরে প্রচুর সব্জি চাষ হয়। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন থাকায় বহু একর জমিতে সব্জি চাষে ক্ষতি হয়েছে। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি ব্লকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর সব্জি খেত এখনও জলমগ্ন। এখানে নানা ধরনের সব্জি চাষ হয়েছিল। দফতরের আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “জলমগ্ন জমিতে সব্জি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যদি জলমগ্ন পুরো জমির সব্জি নষ্ট হয়ে যায়, তবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিসেব মতো এক বিঘে জমিতে সব্জি নষ্ট হলেই ৪০-৫০ হাজার
টাকার লোকসান হয়।” |
|
দাসপুরের বালিপোতা গ্রামে জলমগ্ন ধান খেত। —নিজস্ব চিত্র। |
এই পরিস্থিতিতে প্রান্তিক থেকে সম্পন্ন চাষি, সকলেরই মাথায় হাত। ক্ষতি সামলানো থেকে গোটা বছর সংসার চলবে কী করে— তা ভেবে পাচ্ছেন না বেশিরভাগ চাষি। ঘাটাল ব্লকের দেওয়ানচকের বন্দিরাম ঘোষ, খাসবাড়ের মধু বেজ, দাসপুরের নাড়াজোলের হেমন্ত কোটালের মতো অনেকেই এ বার চারবার আমন ধানের বীজতলা পুঁতেছিলেন। ধানগাছ বড়ও হয়েছিল। কিন্তু বন্যার জেরে মাঠে জল জমে প্রতিবারই ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অথচ, এই ধান চাষ করেই বন্দিরাম, মধুবাবুদের সংসার চলে। দাসপুরের কলমিজোড়ের সব্জি চাষি মায়া ধাড়া, শ্রীমন্ত কোলেদেরও এক অবস্থা।
দুর্যোগে বিপন্ন চাষের খরচ কী ভাবে তুলবেন ভেবে পাচ্ছেন না চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ির সব্জি চাষি হারাধন পাত্র,গুণধর সানকি, ধান চাষি চঞ্চল কোটাল, প্রভাস নায়েকরা। প্রভাসবাবু বলেন, “এ বছর তিন বার আমনের চাষ করেছিলাম। এবার গাছ বড় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আচমকাই বন্যায় ধান খেতে জল জমে গিয়েছে। এখনই গাছের গোড়া পচতে শুরু করেছে। কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।” সব্জি চাষি হারাধনবাবু বলেন, “আড়াই বিঘা জমিতে জলদি জাতের ফুলকপি, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, বেগুনের চারা লাগিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” অন্য চাষিরাও একই সঙ্কটে। সব্জি চাষে ক্ষতির প্রভাব পড়েছে বাজারেও। ঢ্যাঁড়স, পটল, বেগুল, লঙ্কা সবকিছুর দামই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে। |
|
জল নামেনি পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুরে। |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক বন্যায় এখনও পর্যন্ত জেলার ১৮টি ব্লকে মোট ১৫০০টি মৌজায় ৫০ হাজার হেক্টর ধান খেতে জল ঢুকেছে। এর মধ্যে পাকা ধান, সদ্য রোওয়া ধান-সহ বিভিন্ন প্রকারের ধানজমি রয়েছে। সহ কৃষি-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “এখনও বিভিন্ন ব্লক খবর আসছে। চাষিরা যাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সে জন্য এ বার বোরো, সরষে, তিল, বাদাম চাষের উপর জোর দেওয়া হবে।” কৃষি দফতর সূত্রেই খবর, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে কৃষি ভবনে বন্যার জেরে চাষের অবস্থা নিয়ে বৈঠক করেন দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, দফতরের আধিকর্তা অসিতবরণ সাহা। সঙ্গে ছিলেন জেলার কৃষি দফতরের উপ আধিকর্তা (প্রশাসন) নিমাই রায়-সহ দফতরের একাধিক আধিকারিক। বৈঠকে সাত দিনের মধ্যে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমির পরিমাণ এবং চাষিদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|