|
|
|
|
চলছে ত্রাণ বিলি, নামছে জল |
সরকারি কর্মীদেরই কৃতিত্ব দিলেন মুকুল |
দেবমাল্য বাগচি • কেশিয়াড়ি |
জল নামতে শুরু করায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে প্রশাসনের। তবে ত্রাণ বিলি নিয়ে অভাব-অভিযোগ কাটেনি এখনও। তবুও অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সরকারি কর্মী-আধিকারিকদের প্রশংসা করে দুর্গতদের সরকারি ত্রাণের ‘অঙ্গীকার’ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
বৃহস্পতিবার খড়্গপুর মহকুমার কেশিয়াড়ি ও দাঁতনে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে ত্রাণ বিলি করে নানা ভাবে সরকারের সাফল্যের দিকটিই তুলে ধরেন মুকুলবাবু। গালুডি ও ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেই দায় চাপিয়েছেন। মুকুলবাবুর কথায়, “পুজোর মধ্যে একটা দুর্যোগ এসেছিল ওড়িশায়। সেই দুর্যোগে ওই রাজ্যে যা ক্ষতি হয়েছে সেখানে আমাদের রাজ্যে ঝাড়খণ্ড ও ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় আরও ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্র একবারের জন্যও জানায়নি।” বন্যা পরবর্তীকালে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে জলমগ্ন এলাকায় ছুটে এসেছেন, ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করেছেন, সেই কথা মনে করিয়ে দেন মুকুলবাবু। বলেন, “আপনারা এতদিন এ রকম মুখ্যমন্ত্রী দেখেননি। তিনি ঘরের মেয়ে হয়ে ১২ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন।” |
|
কেশিয়াড়ির ডাডরায় ত্রাণ বিলি করছেন মুকুল রায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এ দিন মুকুলবাবু প্রথমে কেশিয়াড়ি ব্লক পরিদর্শন আসেন। ব্লকের বাঘাস্তি ও নছিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দু’টি দুর্যোগে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঘাস্তির কুলবনি ও নছিপুরের ডাডরাতে মঞ্চ বেঁধে এ দিন ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিটি মঞ্চে ৫০টি রাজ্য সরকারের বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের ত্রাণসামগ্রী ও ৫০টি ব্লক প্রশাসনের ত্রাণ সামগ্রী বিলি করা হয়। ত্রাণ পাওয়ার পরে বাঘাস্তির রঙ্গীদাসের সমরেশ পাত্র, নছিপুরের হরিপুরের ধীরেন পাত্র, সমীর বেরারা হাসিমুখে বলেন, “দু’দিন খুব কষ্টে ছিলাম। আমাদের খুব উপকারে লাগল এই সাহায্য।” এই ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। তার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় ১৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশের হাতেই এখনও ত্রাণ তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। নছিপুরের ডাডরা গ্রামের স্নেহলতা মাইতি, হরিপুরার সঙ্গীতা দোলই, দক্ষিণ ডুমুরকুলার শ্রীমন্ত বেরা, পানসগঞ্জের বীণা বেহরা, বাঘাস্তির কুলবনির তরঙ্গিণী পয়রার কথায়, “ত্রাণ ও ক্ষতিপূরন দেওয়া হবে বলে শুধু শুনেছি। এখনও হাতে কিছুই পাইনি। অনেকে পেয়েছে। বলছে তো সবাইকে দেবে। কিন্তু কবে?” মুকুলবাবু অবশ্য প্রত্যেক দুর্গত ত্রাণ পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। দুর্গতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ত্রাণ পাবে। এটা সরকারের অঙ্গীকার।” তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছেন। মৃতদের পরিবারের হাতে ২লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।” চাষের ক্ষতি মেটাতেও সাহায্যের কথা জানিয়েছেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “এই বন্যায় বহু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যারা ঋণ নিয়েছেন তাঁদের সাহায্য করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমির হাল ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।” এ দিন ডাডরার গ্রামবাসীরা মঞ্চের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে মাধ্যমিক স্কুলের দাবি তোলেন। সাংসদ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
সাংসদের সঙ্গে এ দিন ছিলেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী, মহকুমাশাসক আর বিমলা, বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী প্রমুখ। তাঁদের সামনেই বুপর্যয় মোকাবিলায় সকলের পরিশ্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মী ও আধিকারিকরা যে ভাবে কাজ করছেন তাতে মনে হচ্ছে এটা একটা নতুন সন্ধিক্ষণ।” এ দিন কেশিয়াড়িতে ত্রাণ বিলির পর দাঁতনের আঙ্গুয়া পঞ্চায়েত অফিসের ত্রাণ শিবিরেও যান তিনি। সেখানে সরকারের তরফে ১০০টি ‘রিলিফ কিট’ ছাড়াও দুশো দুর্গতকে ত্রিপল দেওয়া হয়। সেখান থেকে মোহনপুর ব্লকে যান মুকুলবাবু। স্থানীয় নিমপুর ক্যানাল দিয়ে সুষ্ঠু ভাবে জল না যেতে পারায় ব্লকের নীলদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডোবারিয়া, কাঁটাবনী ও ধুইপাড়া গ্রামে জলমগ্ন পরিস্থিতি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬০টি পরিবার। এ দিন মুকুলবাবু ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্তের হাতে ব্লক প্রশাসনের ত্রাণ তুলে দেন। তিনি নিমপুর ক্যানাল সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|