|
|
|
|
ব্রুকসাইড বাংলো সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। হেসে জানতে চাইলেন, “কোন ঘরে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ?”
সাত বছরের ‘যুদ্ধ’ শেষে এ ভাবেই জয়ের স্বাদ পেলেন শিলং-এর মালবিদা বিশারদ।
রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য ব্রুকসাইড বাংলোর সংস্কারের দাবি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের দরজায় ঘুরেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে এ বার সেই স্বপ্নপূরণ হল তাঁর। মালবিকাদেবীর আগামী লক্ষ্য, বিশ্বকবির স্মৃতিবিজরিত ওই বাংলোকে হেরিটেজ ঘোষণা করিয়ে তার লাগোয়া বিধানসভা ভবনের স্থান পরিবর্তন।
কলকাতার বেহালা এলাকার মেয়ে মালবিকাদেবী। ২০ বছর আগে বিয়ে করে পাড়ি দিয়েছিলেন রিলবং-এ। ব্রুকসাইডের সামনেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। রবীন্দ্র অনুরাগিনী মালবিকাদেবী ২০০৬ সাল থেকে ব্রুকসাইড সংস্কারের জন্য ‘লড়াই’ শুরু করেন। তার পরে চারবার মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে মেঘালয়ে। সকলের কাছেই দরবার করেছেন তিনি। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকার, শান্তিনিকেতন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছেও এ নিয়ে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।
এরপরই সরাসরি রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হন মালবিকাদেবী। আবেদনে সাড়া দেন প্রণববাবু। রাষ্ট্রপতি ভবনের হস্তক্ষেপে ওই বাংলো মেরামতির কাজ শুরু হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত খাট সারাই করে। বাড়ির সামনে কবির মূর্তি বসানো হয়। |
রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ছবি: উজ্জ্বল দেব। |
মেঘালয় বিধানসভায় একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি যোগ দিতে যাবেন জেনে মালবিকাদেবী তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে ব্রুকসাইড ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন প্রণববাবু। গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি কপালে তিলক দিয়ে, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে মালবিকা জানান, তাঁর কাছে বারবার চিঠি পাঠাতেন তিনিই। হেসে রাষ্ট্রপতি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “কতদিন রয়েছেন শিলং-এ?’’
ব্রুকসাইড ঘুরে দেখার সময় মালবিকাদেবীর কাছ থেকে প্রণববাবু জেনে নেন, কোন ঘরে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। দেওয়ালে ঝোলানো ‘শেষের কবিতা’র বাঁধানো ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে মিনিট তিনেক ধরে তা পাঠ করেন প্রণববাবু। দেখেন রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপিও। গতকাল ব্রুকসাইডের নতুন নামকরণও করা হয়। সেটির নতুন পরিচয় হয়েছে, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর্ট গ্যালারি’ হিসেবে। ফিরে যাওয়ার আগে ‘ভিজিটার্স বুকে’ ব্রুকসাইডে প্রথমবার এসে তাঁর মুগ্ধতার কথা লিখে যান প্রণববাবু। রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান।
রাষ্ট্রপতির সফরে উচ্ছ্বসিত মালবিকাদেবী। তিনি বলেন, “প্রণববাবুর উদ্যোগ ছাড়া একা লড়াই জিততে পারতাম না। আমি চাই ব্রুকসাইডকে দ্রুত হেরিটেজ ভবন ঘোষণা করা হোক। নিয়ম অনুযায়ী, হেরিটেজ ভবন চত্বর থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক বিধানসভা ভবনটিকে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বর্তমানে মেঘালয়ের বিধানসভা ভবনটি অস্থায়ীভাবে সেখানে রয়েছে। স্থায়ী বিধানসভা ভবন তৈরির বিষয়টি জমিজট এবং পরিবেশবিদদের আপত্তিতে থম্কে রয়েছে।
১৯১৯ সালে শিলং গিয়ে রিলবং-এর ব্রুকসাইডে তদানীন্তন চট্টগ্রামের সহকারী কমিশনার কিরণচন্দ্র দে বাংলোয় উঠেছিলেন কবিগুরু। সেখানেই লেখা হয়েছে ‘শেষের কবিতা’। একটি দিন, একটি চাউনি গল্পও লেখেন রবীন্দ্রনাথ। লীলা মজুমদার ওই বাড়িতেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। ১১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ওই বাংলোতে থাকার পর গুয়াহাটি রওনা হন কবিগুরু।
মালবিকাদেবী জানান, ১৯৯০ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল মধুকর দিঘের আমলে শেষ বার বাড়িটির সারাইয়ের কাজ হয়। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘টেগোর আর্ট গ্যালারি।’ তারপর রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। কার্যত ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছিল বাংলোর ঘরগুলি। পাশেই মেঘালয় বিধানসভা থাকলেও, সরকারি দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত ছিল ব্রুকসাইড। |
পুরনো খবর: উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের আলোচনায় ডাক প্রণবের
|
|
|
|
|
|