|
|
|
|
উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের আলোচনায় ডাক প্রণবের
শঙ্খদীপ দাস • শিলং |
ব্রাসেলসে ক’দিন আগেই সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে পাকিস্তানের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। আর আজ দেশের মাটিতে দাঁড়িয়েও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, অশান্তি ও হিংসার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেড় দিনের উত্তর-পূর্ব সফরের প্রথম দিনে আজ মেঘালয় পৌঁছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বার্তা গণতন্ত্রে আলোচনাই শেষ কথা। বিরোধ মীমাংসায় দিল্লি সব ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
আজ দুপুরে রাষ্ট্রপতি যখন শিলং পৌঁছন, তখন শহর যেন থমকে রয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আদিবাসী গোষ্ঠীর হুমকিতে গত কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ চলছে এখানে। যেমনটা হামেশাই হয়। হেলিপ্যাড থেকে রাজভবন থেকে বিধানসভা পর্যন্ত কম্যান্ডো বাহিনীর কড়া শাসন। সুনসান সড়কে মানুষের দেখা নেই!
এক কথায়, বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রেক্ষাপট যেন তৈরিই ছিল। কিন্তু তেতাল্লিশ বছর ধরে পোড় খাওয়া রাজনীতিক সেই পরিবেশ সইবেন কেন? বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো রক্ষায় যিনি বরাবর সওয়াল করে এসেছেন! সংসদে আইন পাশ করে ’৭২ সালে এই মেঘালয়ের জন্ম হতে দেখেছেন প্রণববাবু। সে দিন মেঘালয়ের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী উইলিয়াম সাংমার হাত ধরে অকুণ্ঠ অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। সেই মেঘালয়ে অশান্তির মেঘ যেন তাঁর মনে আজ অসন্তোষ জাগিয়ে তোলে। |
|
গুয়াহাটি বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন অসমের
মন্ত্রিসভার
সদস্য এবং প্রশাসনিক কর্তারা। সোমবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
যদিও একটাও কড়া শব্দ ব্যবহার করেননি রাষ্ট্রপতি। তাঁর লিখিত বক্তৃতায় লেখা ছিল, ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সঙ্গে কোনও দিনও আমরা আপস করব না। যে কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কঠোর হাতে দমন করতে হবে।’ কিন্তু লিখিত বক্তৃতা তিনি পড়েননি। তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় বলেন, “গণতন্ত্রে আলোচনাই শেষ কথা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বরাবর আলোচনার পক্ষে। নয়াদিল্লি মনে করে, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
এ প্রসঙ্গে তিনি লোকপাল বিল প্রণয়নে অণ্ণা হজারের আন্দোলনের উল্লেখ করেন। বলেন, “নাগরিক সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁদের আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। সরকার চাইলে তাঁদের কথা না শুনতেই পারত। কারণ আইন প্রণয়নের অধিকার শুধু সংসদ ও তার সদস্যদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই বলেন, ওঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। এমনকী আলোচনার জন্য একটি অতি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গড়ে দেন।”
রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তর পূর্বে সফরে এসে রাষ্ট্রপতির এই কথাগুলোর তাৎপর্য একটাই। তা হল, আলোচনার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদের সমাধান। মেঘালয়ে বহু উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের এক-এক জনের ভাষা ও আচার এক-এক রকম। সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রণববাবু বলেন, “গোটা ভারতে ভাষা ও জাতি-বৈচিত্রের শেষ নেই। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য গড়ে মেঘালয়ও হয়ে উঠুক এক মিনি ভারত।”
মেঘালয় বিধানসভা ভবনে প্রবেশের সময় বাঁ হাতেই ব্রুকসাইড বাংলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু দিন এই বাংলোয় কাটিয়েছেন। এখানেই ‘শেষের কবিতা’ লিখেছিলেন তিনি। কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথের সার্ধ জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির কর্ণধার হিসেবে এই বাংলোটির সংস্কারে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রণববাবু। আজও ক্ষণিকের জন্য সেখানে যান তিনি। কিন্তু সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় বারবার স্পষ্ট হয়ে যায়, কবিতার জন্য বোধহয় তাঁর সময় নেই। সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির মর্যাদা ধরে রাখা, সংসদের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়াই তাঁর অগ্রাধিকার।
রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েও সেই লড়াইটাই চালিয়ে যেতে চান তিনি। |
|
|
|
|
|