মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরের আগে সুর আরও নরম করছেন বিমল গুরুঙ্গ। এই সফরে প্রথম বারের জন্য দলীয় সমাবেশে যোগ দেবেন মমতা। গুরুঙ্গরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ঠিক আগের দিন, জেলবন্দি বিনয় তামাঙ্গের পরিবর্তে জিটিএ ‘চিফ’ বা প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হবে কর্নেল রমেশ আলেকে। যদিও অস্থায়ী ভাবে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মমতা যখন লেপচাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাহাড়ে যান, বন্ধ ডেকেছিল মোর্চা। হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, কেউ যেন ওই সভায় যোগ না দেয়। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে সেই সুর একশো আশি ডিগ্রি বদলে গিয়েছে গুরুঙ্গদের। মোর্চা সূত্রের বক্তব্য, তাঁরা মনে করছেন, গোর্খাল্যান্ডের জন্য আলোচনাই সব থেকে ভাল পথ। তাই রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ফের সহজ করার তাগিদে পরের পর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যেমন, এ বার মমতাকে পাহাড়ে স্বাগত জানিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রার্থী তিন মোর্চা বিধায়ক। |
এর সঙ্গে যোগ হল জিটিএ-র প্রধান বদলের সিদ্ধান্ত। মমতার সভার আগের দিন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি সদর্থক বার্তাই দিতে চাইছেন গুরুঙ্গরা। আর মোর্চা জিটিএ চালানোর জন্য ফের তৈরি হওয়ার ফলে গোর্খাল্যান্ড অ্যাকশন কমিটিও উঠে যাওয়ার দাখিল হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কবে কী ভাবে হবে এবং সেখানে কী আলোচনা হবে, তাই নিয়ে শনিবার কালিম্পঙের বিধায়ক তথা মোর্চা নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রীর সঙ্গে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের কথা হয়। দলীয় সূত্রের খবর, মোর্চা জিটিএ গড়েও তা না চালানোয় মুখ্যমন্ত্রী যে ক্ষুব্ধ, সেই প্রসঙ্গও ওঠে আলোচনায়। রাজ্যের বিরুদ্ধে কৌশলী চাল দিতে তামাঙ্গকে জিটিএ-র চিফ করেছিলেন গুরুঙ্গরা। কিন্তু রাজ্য মনে করছে, জেলবন্দি কোনও সদস্যকে ওই পদে বসানোয় গুরুঙ্গদের জিটিএ চালানোর সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মুকুল-হরকাবাহাদুরের আলোচনায় এই বিষয়টিও আসে।
রাজ্যের মনোভাব জানতে পেরেই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন গুরুঙ্গরা। মুখ্যমন্ত্রী কঠোর মনোভাব নিলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জিটিএ হাতছাড়া হতে পারে, বৈঠকে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোর্চার একাধিক নেতা। এর পরেই সিদ্ধান্ত হয়, বিনয় তামাঙ্গ মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত প্রধান পদে বর্তমান ডেপুটি চিফ রমেশ আলেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। নরমপন্থী এই নেতা রাজ্য সরকারের কাছেও সমাদৃত।
জিটিএ-র ডেপুটি চেয়ারম্যান লোপসাঙ্গ ইয়েলমো বলেন, “জিটিএ সভা যাঁকে ‘চিফ’ মনোনীত করেছিল, সেই বিনয় তামাঙ্গ জেলে। কবে ছাড়া পাবেন ঠিক নেই। কিন্তু উন্নয়নের কাজ তো আটকে থাকতে পারে না! তাই দলের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে, জিটিএ চালালেও তাঁরা ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড’-এর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও মোর্চা নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
এর মধ্যে দার্জিলিঙে দলনেত্রীর প্রথম দলীয় সমাবেশে সফল করতে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে রোজই তৃণমূল পাহাড়ে মিটিং-মিছিল করছে। এ দিনও কালিম্পঙের রকি আইল্যান্ড এলাকায় শতাধিক বাসিন্দা তৃণমূলের সভায় এসে দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। জিএনএলএফের একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলর, মোর্চার কালিম্পঙের প্রাক্তন সভানেত্রী আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁরাই আবার গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের মতো মোর্চা-বিরোধী দল তো বটেই, এমনকী মোর্চার বিক্ষুব্ধ নেতা ও জিটিএ সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।
মোর্চার অন্দরের খবর, এতেই ঘাবড়ে গিয়েছেন গুরুঙ্গরা। উপরন্তু, কী ভাবে একটি আসনে না জিতেও রাজ্যের কোথাও পুরসভা, কোথাও পঞ্চায়েত বা শিলিগুড়িতে মহকুমা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল, তা-ও গুরুঙ্গকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। তাই আপাতত জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া আন্দোলনে না গিয়ে জিটিএ-র মাধ্যমে পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ শুরু করতে চাইছেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “কয়েক জন নেতার মর্জিতে পাহাড়ের মানুষকে চলাফেরা করত হবে এমন তুঘলকি আমল আর নেই। সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন।” গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। কমিটির মুখপাত্র এনোস দাস প্রধান বলেছেন, “মোর্চা জিটিএ ছাড়বে, এই শর্তেই কমিটি তৈরি হয়েছিল। এখন তারা জিটিএ-তে ফিরে গেলে কমিটি থাকবে কী করে!” |