মোহালিতে শনিবার ভারতের হারের বেশির ভাগ দায় পড়ছে টিমের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার ইশান্ত শর্মার ঘাড়ে। দিল্লির পেসার নিয়ে ময়নাতদন্তে বসে পড়েছেন দেশের প্রাক্তনরাও।
কী বলছেন তাঁরা? প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার মদনলালের কথায়, “ইশান্তকে দেখেই মনে হচ্ছে ওর আত্মবিশ্বাস কম। বরাবরই ওর মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। পাঁচ বা ছ’ওভার, না হলে একটা-দুটো ম্যাচে ভাল বল করে ইশান্ত। তার পর চার-পাঁচটা ম্যাচে ছন্দ পায় না। এক জন সিনিয়র বোলারের কাছ থেকে এ রকম ধারাবাহিকতার অভাব শকিং। এত ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ইশান্ত কোথায় ব্যবহার করে? ও কি আদৌ নিজের বোলিং নিয়ে কাটাছেঁড়া করে? এক জন বোলারই তো নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করবে।”
আর এক প্রাক্তন মনোজ প্রভাকর আবার আরও আক্রমণাত্মক। “আমি অনেক বার বলেছি, ইশান্তের বোলিং অ্যাকশনের গোড়াতেই গলদ আছে। বল করার সময় ও বাঁ হাতটাকে পুরো ছেড়ে দেয় বলে ফলো-থ্রুর উপর ওর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গতি কমিয়ে যতই ইশান্ত লাইন-লেংথের উপর ফোকাস করুক, ভুল অ্যাকশনের জন্য কিন্তু ওকে ভুগতে হচ্ছে,” বলছিলেন প্রভাকর। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আইপিএলে সানরাইজার্স টিমে ও ডেল স্টেইনের সঙ্গে বল করেছে। ওদের বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিস। তার আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সময় ওয়াসিম আক্রমকে পেয়েছে ইশান্ত। এই দু’জন অসাধারণ বোলারের কাছ থেকেও যে ইশান্ত ডেথ বোলিংয়ের অ-আ-ক-খ শিখতে পারেনি, সেটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।” |
বাকি সিরিজেও দলে। রাঁচি পৌঁছে ইশান্ত। ছবি: পিটিআই। |
মনিন্দর সিংহ আবার চিন্তিত ভারতীয় বোলিংয়ের দলগত ব্যর্থতা নিয়ে। তাঁর কথায়, “এটা খুবই দুঃখের যে ভারতীয় টিমে এমন এক জনও বোলার নেই যে ডেথে বল করতে পারে। ইশান্ত এত অভিজ্ঞ হয়েও ব্যর্থ, কারণ ও স্ট্রাইক বোলার নয়, আবার ডেথ বোলারও নয়। টিমে ওর ভূমিকা কী, বোঝা খুব কঠিন। বিনয় কুমারও তো সব সময় শর্ট বল করে। জানতে ইচ্ছে করে, এরা কি আদৌ নেটে ডেথ বোলিং প্র্যাকটিস করে? কোচিং স্টাফ কি ওদের সাহায্য করছে?”
কোচিং স্টাফের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন মদনলাল। তিনি বলছেন, “ইশান্তরা তো বাচ্চা নয় যে ওদের লাইন-লেংথের গুরুত্ব শেখাতে হবে। কোচিং স্টাফ ওদের বোলিং অ্যাকশন শুধরে দিতে পারে। কিন্তু ডেথ বোলিং তো শেখাতে পারে না! সেটা ওদের মাথা খাটিয়ে করতে হবে।”
সিরিজে যে ভারত ১-২ পিছিয়ে, তার পিছনে টিমের স্পিনারদের দায়ও কম নয়। উপমহাদেশের পিচেও রবীন্দ্র জাডেজা, অশ্বিনরা ব্যর্থ। রায়না, যুবরাজ, কোহলির মতো অনিয়মিত বোলাররাও তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। যা নিয়ে মনিন্দরের বক্তব্য, “স্পিনাররা দুটো নতুন বলে বল করতেই পারে। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের বিধিনিষেধ ওদের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলছে। বৃত্তের বাইরে মাত্র চার জন ফিল্ডার থাকলে ওরা ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাবে কী ভাবে?” সঙ্গে অবশ্য তাঁর প্রশ্ন, “সব ক্রিকেটাররাই তো সেপ্টেম্বরে লম্বা ছুটি কাটিয়েছে। তখন কি ওরা ঠিকঠাক প্র্যাকটিস করেনি? ওরা কি জানত না এই নিয়মগুলোর কথা? তখন কি ওরা নতুন নিয়মের জন্য নতুন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারত না?”
মোহালিতে শনিবার ম্যাচ হারানোর পরেও বাকি সিরিজের দলে রেখে দেওয়া হয়েছে ইশান্তকে। যা নিয়ে মদনলাল বলছেন, “ইশান্তকে দলে রাখা হয়েছে দেখে অবাকই হয়েছি। বাকি বোলারদের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। কিন্তু নির্বাচকদের উচিত ছিল ইশান্তকে ছেঁটে ফেলা। যাতে ও অন্তত নিজের বোলিং নিয়ে ভাবার সুযোগ পায়। তবে হয়তো অধিনায়কই ওকে দলে চেয়েছিল!” |