জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এবং পারদ-আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধির জেরেই মাছেদের মড়ক লেগেছে দীপর বিলে। অসমের মৎস বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে এমনই জানা গিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের একমাত্র ‘রামসার ক্ষেত্র’ (রামসার সাইট) ওই বিলে মরা মাছ ভেসে উঠছিল।
পরিবেশবিদদের মতে, ওই জলাশয়ের সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাঁরা জানিয়েছেন, দীপর বিলের জলে আবর্জনা ফেলা, আশপাশের জমি বেদখল এবং নিকাশি নালাগুলির দূষিত জল মিশে যাওয়ায় সেখানকার জল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে প্রশাসনকে বহুবার সতর্ক করা হলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। উদাসীন ছিল বন-পরিবেশ এবং মৎস দফতরও।
ওই জলাশয়ে দূষণ ছড়ানোর বিষয়টির তদন্তে ২০০৮ সালে ১২ সদস্যের বিশেষ কমিটি গড়েছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রক। বিলের জল এবং স্থলভাগ পরীক্ষার পর, ইন্দ্রাণী চন্দ্রশেখরণের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি একটি রিপোর্টে জানায়, বিলে প্রতি লিটার জলে পারদের পরিমাণ প্রায় ১৪০ মাইক্রোগ্রাম। আর্সেনিক রয়েছে লিটারে প্রায় ১৬৯ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। অক্সিজেনের পরিমান লিটারপ্রতি ১.৬ মিলিগ্রাম। এ সবই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি। এর প্রেক্ষিতে ওই কমিটি জানিয়েছিল, দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না-নিলে বিলের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপরে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে। বিলের মধ্যেই পাট্টা জমি, কচুরিপানা, ইটভাটা, যথেচ্ছ মাছ ধরা, জলে প্রবহমানতার অভাব, অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়েও রিপোর্টে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
অভিযোগ, বিলের জল পরিষ্কারের জন্য মহানগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও, কাজ এগোয়নি। বিল সংলগ্ন জমিগুলিও দখলমুক্ত করা যায়নি। ক্রমে ইট-কংক্রিটের ফাঁদ ঘিরেছে দীপর বিলকে। ভরলু ও বাহিনী নদীর জলের দূষণ কমানোর উদ্যোগও সে ভাবে কার্যকর হয়নি। এখনও প্রতিদিন আবর্জনার স্তূপ জমছে বিলের পাশেই। বৃষ্টি হলেই সেখান থেকে জলে দূষিত নানা জিনিস মিশছে। আইন ভেঙেই ওই জলাশয়ের আশপাশে তৈরি হয়েছে কয়েকটি কারখানাও। বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়াচ্ছে সে গুলিও। এলাকার পরিবেশপ্রেমী লক্ষণ টেরন জানান, বিলের মাছ খেয়ে কয়েক বছরে ৫০-৬০টি বিপন্ন প্রজাতির হাড়গিলারও মৃত্যু হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মহানগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই জলাশয়কে কেন্দ্র করে ‘ইকো ট্যুরিজম’ তৈরির পরিকল্পনা করছে। মৎস বিভাগের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাস্তব পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে, মাছের বেঁচে থাকার জন্য জলে লিটারপ্রতি কমপক্ষে ৩-৪ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকতে হয়। বিলের জলে অক্সিজেনের মাত্রা তার চেয়ে অনেকটা কম হওয়ায় মাছ বাঁচতে পারছে না। মীন বিভাগের কর্তারা মেনেছেন, দীপর বিলের পরিস্থিতি যথেষ্টই উদ্বেগজনক।
গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম গোস্বামীর বক্তব্য, প্রাথমিক পর্যায়ে ওই বিলের জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে ‘ও ২ ম্যাক্স’ এবং ‘অক্সিমার’ রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ দিকে, শীত আসার আগেই দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির ভিড় জমেছে দীপর বিলে। প্রায় ১২০ প্রজাতির পাখি রয়েছে তাতে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখানকার জলে ১৯টি জাতি ও ৫০টি প্রজাতির মাছ রয়েছে। জলজ প্রাণী রয়েছে ২৭টি প্রজাতির। ১৯৮৯ সালে দীপর বিলের মূল অংশটি অভয়ারণ্য হিসেব ঘোষণা করা হয়। |