পরিবেশ দফতর ছাড়পত্র না দেওয়ায় আটকে গেল ধাপার পাশে কুকুরদের রাখার জন্য একটি আধুনিকমানের ‘ডগ পাউন্ড’ তৈরির প্রকল্প। পুর-কর্তৃপক্ষ বিকল্প জমির খোঁজ করছেন।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “রাস্তার কুকুরদের রাখার জন্য ডগ পাউন্ডের খুব প্রয়োজন। দু’টি রয়েছে। তার মধ্যে একটিকে বড় করা হচ্ছে। বাইপাসের পাশে ফাঁকা জমিতে আরও একটি আধুনিক মানের ডগ পাউন্ডের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জায়গাটি যে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অন্তর্গত, জানা ছিল না। ফলে পরিবেশ দফতরের অনুমতি মেলেনি।”
বাইপাসের ধারে যেখানে ডগ পাউন্ড তৈরির পরিকল্পনা হয় সেটি পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অন্তর্গত। ফলে এখানে কিছু তৈরি করতে গেলে রাজ্য পরিবেশ দফতরের অনুমতি চাই। পরিবেশ দফতর এই অনুমতি দেয়নি। দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাইপাসের ধারে প্রায় ১২,৫০০ হেক্টর এই জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য ‘রামসার’ কনভেনশনের নিয়ম মানা হয়। এই এলাকা ‘রামসার’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এখানে কোনও নির্মাণ করা যায় না। পরিবেশ দফতরের সিদ্ধান্ত জানার পরে কলকাতা পুরসভা এই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসে। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য রামসার কনভেনশনে যা নিয়ম রয়েছে তা মেনে চলতে আমরা বাধ্য। তাই ওখানে কোনও নির্মাণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
রাস্তার কুকুরদের ধরে ডগ পাউন্ডে রেখে নির্বীজকরণ ও চিকিৎসা করা হয়। পূর্ব কলকাতার হাটগাছিয়া ও এন্টালিতে ডগ পাউন্ড রয়েছে। হাটগাছিয়ার পাউন্ডে ৩০০টি খাঁচা রয়েছে। এন্টালির ডগ পাউন্ডটি বন্ধ। এখানে একটি বড় পাউন্ড তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কেন্দ্রের ‘অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণের বিষয়ে যে নিয়ম তৈরি করেছে সেগুলি মেনে কুকুরদের ধরা, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া ও নির্বীজকরণ হয়। বিষয়টি দেখাশোনার জন্য পুরসভায় ‘সোসাইটি ফর স্ট্রে ক্যানাইন বার্থ কন্ট্রোল’ নামে একটি কমিটি রয়েছে। পুরসভা ও রাজ্যের প্রতিনিধি ছাড়াও কয়েক জন পশুপ্রেমিক এর সদস্য।
এই কমিটির সম্পাদক তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রের নিয়ম মেনেই পুরসভা রাস্তার কুকুর ধরে। পাউন্ডে রেখে তাদের নির্বীজকরণের পরে তাদের এলাকাতেই ফের ছেড়ে দেওয়া হয়।” পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরে ১৯৮০টি কুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের স্পেশ্যাল অফিসার দেবাশিস সেন বলেন, “শহরে আগে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই কাজ করত। এখন পুরসভাই এই কাজ করে। কুকুর ধরার জন্য ছ’খানা গাড়ি ছাড়াও পুরসভা এই কাজের জন্য চুক্তিভিত্তিতে বেশ কিছু লোক নিয়োগ করেছে। হাটগাছিয়ার ডগ পাউন্ডটিরও আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। তবে, শহরে আরও একটি বড় ডগ পাউন্ড দরকার।”
‘সোসাইটি ফর স্ট্রে ক্যানাইন বার্থ কন্ট্রোল কমিটির সদস্য এবং বিধায়ক দেবশ্রী রায় বলেন, “রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণের বিষয়ে পুরসভা ভালই কাজ করেছে। তবে, শুধু নির্বীজকরণই নয়, রাস্তার অসুস্থ কুকুরদের যাতে খাঁচায় রাখা যায় সেই ব্যাপারেও ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন। শহরে বড় ডগ পাউন্ড তৈরি হলে উপকার হবে।” |