মাঠের চারপাশ ঘিরে রেখেছে থিকথিকে ভিড়। আশপাশের গাছের ডালেও মানুষ। সবার চোখ মাঠের দিকে। একটা লোক নাগাড়ে কাপড় ঘুরিয়ে দু’টি ষাঁড়কে খেপিয়ে যাচ্ছে। বিশালবপুর দুই উন্মত্ত ষাঁড় মাটিতে পা ঠুকে একে অন্যকে তেড়ে যাচ্ছে। শিংয়ের গুঁতো লাগতেই দর্শকদের চিত্কারে ডুবে যাচ্ছে মাঠ।
কাড়ার লড়াই দেখতে রবিবারের সকাল থেকে পুঞ্চার নপাড়া গ্রামের মাঠে বাস্তবিক ভিড় ভেঙে পড়েছিল। বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড় তত ছড়িয়েছে মাঠ থেকে আশপাশের রাস্তায়। অনেকের নজর মাঠের ভিতরেও যাচ্ছিল না। কিন্তু উত্সাহে খামতি ছিল না। লড়াইয়ে পোষা মোষ জিতে যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে আনন্দে লাফালাফিও করলেন অনেকে। মোটা টাকার পুরষ্কার পেয়ে কেউ কেউ বিজয়ীর হাসি নিয়ে কাড়ার সঙ্গে বাড়ি ফিরলেন। |
টক্কর। পুঞ্চার নপাড়া গ্রামে রবিবার ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো। |
জেলায় সব থেকে বড় কাড়া লড়াইয়ের আসর বসে এখানে। এমনটাই দাবি করলেন এই লড়াইয়ের আয়োজক মানভূম লোকসংস্কৃতি ইউনিটের অন্যতম কর্মকর্তা অপূর্ব সিংহ। তিনি বলেন, “এ বার কাড়ার লড়াই ১৬ বছরে পড়ল। কাড়ার লড়াই রাঢ় বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সেই ধারাটিকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।” তাঁর কথা চাপা পড়ে গেল মাইকের আওয়াজে আর দর্শকদের হইচইয়ে। মাইকে ঘোষণা চলছে, গাছে প্রচুর মানুষ উঠে পড়েছেন। নেমে পড়ুন। গাছের ডাল ভেঙে বিপদ হতে পারে।” কে শোনে কার কথা! দু’একজন অতুত্সাহী দর্শক আবার লড়াই দেখতে দেখতে বেড়া টপকে কখন যে লড়াইয়ের ময়দানের ভিতরে চলে এসেছিলেন খেয়াল করেননি। লাঠিধারী কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক রে রে করে তাঁদের দিকে তেড়ে এলেন। ঠেলা মেরে সরিয়ে দিলেন বেড়ার বাইরে। কমিটির এক কর্মকর্তা জানালেন, এমন বেয়াড়া দর্শকদের সামলাতে তাঁরা ১০০ জন লাঠিধারী স্বেচ্ছাসেবক রেখেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত বড় ধরণের কোনও অশান্তি এখানে ঘটেনি।
আড়শার বাসিন্দা ভজহরি সিং, অবোধ সহিসরা গাড়ি ভাড়া করে মাঠে এসেছেন। আখ চিবোতে চিবোতে তাঁরা বলেন, “আমরা প্রতিবছরই এখানে কাড়ার লড়াই দেখতে আসি। আমাদের গ্রামের কাড়াও আনা হয়েছে। তাকে জেতাতে সবাই মিলে গলা ফাটাব। তাই গ্রাম থেকে ১২ জন এসেছি।” সেই কাড়া শেষ পর্যন্ত ওই ১২ জনের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল কি না জানা যায়নি।
দুপুর বিকেলের দিকে গড়াতে ফের কানে এলো মাইকের আওয়াজ। এ বার মোরগ লড়াই শুরু হবে। কিছু লোক তাগড়াই চেহারার মোরগ নিয়ে মাঠের ঘেরা জায়গাটার দিকে দৌড়োলেন। আয়োজকরা জানালেন, কাড়া আর মোরগের লড়াইয়েই সব শেষ নয়। সন্ধ্যার পরে রয়েছে নাচগানের আসরও। যেন সারা বছরের জমিয়ে রাখা সবটুকু আনন্দ এ দিনই নিংড়ে নিতে চাইছেন পুরুলিয়া জেলার এই মানুষগুলি। |