রাস্তা উঁচু করে বন্যা ঠেকানোর পরিকল্পনা হাওড়ার দু’টি ব্লকে
দীবাঁধ তৈরি করা যাবে না। তাই ফি-বছর ডিভিসি-র ছাড়া জল বা অতিবর্ষণে বানভাসি হওয়া হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লককে পাকাপাকি ভাবে বাঁচাতে একটি রাস্তা উঁচু করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সেচ দফতর।
আমতা থেকে জয়পুরের সেহাগড়ি মোড় হয়ে যে রাস্তা উদয়নারায়ণপুরের উপর দিয়ে তারকেশ্বর গিয়েছে সেই রাস্তার ৩০ কিলোমিটার অংশ এক মিটার উঁচু করে দামোদর উপচে আসা জল আটকানো হবে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। দামোদরের পশ্চিম দিকের পাড় বরাবর সমান্তরালে অবস্থিত রাস্তাটি। দামোদর থেকে দূরত্ব এক কিলোমিটারের মধ্যে। দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের মতে, ‘স্পিল’ এলাকা হওয়ায় যে হেতু দামোদরের পশ্চিম পাড়ে বাঁধ দেওয়া যাবে না, তাই রাস্তাটি উঁচু করলেই তা বাঁধের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তাটি এক মিটারের মতো উঁচু করতে কত খরচ হবে তা আমাদের দফতরের আধিকারিকেরা হিসাব করছেন। বিশেষজ্ঞ সংস্থারও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যে হিসাব পেয়ে যাব। তার পরেই নিয়ম মেনে স্কিম জমা দেওয়া হবে কেন্দ্রের কাছে।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নিয়ম মেনেই ডিভিসি উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুরসুট থেকে আমতা-২ ব্লকের থলিয়া পর্যন্ত দামোদরের ২৬ কিলোমিটার অংশকে ‘স্পিল’ এলাকা বলে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, এই অংশের এক দিকে, বাঁধ দেওয়া যাবে। অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে ডিভিসি-র ছাড়া জল। সেই নিয়ম মেনেই দামোদরের পূর্ব পাড়ে (এ দিকেই হাওড়ার শহরাঞ্চল) বাঁধ গড়ে সেচ দফতর। উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ দফতরের বাঁধ না-থাকলেও কিছুটা এলাকায় রয়েছে পূর্বতন জমিদারি বাঁধ। বর্ষার আগে তা মেরামত করা হলেও দুই ব্লকে প্লাবন আটকানো যায় না। বাঁধ না-থাকায় ডিভিসি ৫০ হাজার কিউসেকের আশপাশে জল ছাড়লেই উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লকের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। তাই দুই ব্লকের বাসিন্দারাই একাধিকবার জমিদারি বাঁধ উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মের গেরোয় তা মানা যায়নি। এ বছর দফায় দফায় ডিভিসি জল ছেড়েছে মোট ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ২৫০ কিউসেক। গত সোমবার সর্ব্বোচ্চ জল ছাড়ার হার ছিল ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কিউসেক। দামোদরের বাঁধ উপছে জল এ বার ভাসিয়ে দিয়েছে দুই ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শুধু ‘স্পিল’ এলাকা বলেই নয়, এখন দামোদরের পশ্চিম পাড়ে নতুন করে বাঁধ দেওয়ার অনুমতি মিললেও তা রূপায়ণ কার্যত অসম্ভব। কারণ, জমি মিলবে না। অন্য দিকে, রাস্তা উঁচু করলে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। বালি, মাটি এবং স্টোনচিপস্ দিয়েই রাস্তা উঁচু হয়ে যাবে। রাস্তাটি যে হেতু পূর্ত (সড়ক) দফতরের অধীন, তাই ওই দফতরের কাছ থেকেও অনুমতি নিয়ে নেওয়া হবে বলে সেচমন্ত্রী জানান।
তবে, রাস্তা উঁচু করে প্লাবন ঠেকানোর পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুর্গতদের অনেকে। কেননা, এর আগেও প্লাবন ঠেকানো নিয়ে নানা পরিকল্পনা হয়েছে। সাতের দশকের মাঝামাঝি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে হাতে নেয় নিম্ন দামোদর সংস্কার পরিকল্পনা। এতে আমতা থেকে শ্যামপুর, দামোদরের বুক থেকে পলি তোলার কথা হয়। কিন্তু বাগনানে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে না-পারায় প্রকল্পটি পুরোপুরি রূপায়ণ করা যায়নি। ২০০০ সালের গোড়ায় নিম্ন দামোদর নিকাশি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে আমতা-২ ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত ১৩ কিমি খাল (শর্টকাট চ্যানেল) কাটা হয় ২০০৯ সাল নাগাদ। এর মাধ্যমে দামোদর থেকে ডিভিসি-র ছাড়া জল রূপনারায়ণে পড়ে। কিন্তু তাতেও প্লাবন আটকানো যায়নি। সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, এই খাল মাত্র ৩০ হাজার কিউসেক জল বহন করতে পারে। তাতে বন্যা বা প্লাবনের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সেচমন্ত্রী বলেন, “এ বছর খালটি সংস্কার করা হয়েছে। ফলে অনেকটাই রেহাই মিলেছে। কিন্তু পাকাপাকি বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একটা বাঁধ দিতেই হবে। তবে নদীর পাড়ে নয়। রাস্তা উঁচু করলেই তা বাঁধের কাজ করবে।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.