|
|
|
|
দরকারে কংগ্রেসের পাশে, মত ভিএসের সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
কংগ্রেস-প্রশ্নে সিপিএমের চলতি বিতর্কে নতুন ইন্ধন এবং মাত্রা যোগ করলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। সেই ভি এস, দু’দিন আগেই পলিটব্যুরো যাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য বন্ধ করতে বলেছে!
এ বার ভি এস অবশ্য শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনও নজির গড়েননি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের পরে বামেরা কী করতে পারে, সেই প্রশ্নে নিজের মতামত জানিয়েছেন মাত্র। কিন্তু কেরলের বিরোধী দলনেতার সেই মত এমনই তাৎপর্যপূর্ণ, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ আগামী বৈঠকের আগে যা বিতর্কের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেসকে সমর্থন করতে সিপিএমের কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয় বলেই সরাসরি সওয়াল করেছেন দলের এই প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য।
রবিবার ছিল ভি এসের জন্মদিন। ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে কয়েক দিনে বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, মত বিনিময় করেছেন শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে। এই অবসরেই কংগ্রেস-প্রশ্নে তাঁর যুক্তি পেশ করেছেন ভি এস। এ যাবৎ যাবতীয় সমীক্ষাতেই দেখা যাচ্ছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ইউপিএ বা এনডিএ, কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এই সূত্রে ভি এসের বক্তব্য, কংগ্রেস এবং বিজেপি, দু’পক্ষেরই ক্ষমতায় যাওয়া আটকাতে তাঁরা সক্রিয়। ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তির তার জন্য একজোট হওয়া দরকার। কিন্তু পরিস্থিতি তেমন হলে, বিজেপি-কে রুখতে কংগ্রেসকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে সিপিএমের আপত্তি থাকা উচিত নয়। তাঁর যুক্তি, “বিজেপি-ই আমাদের প্রধান শত্রু।” তাঁর এই মত দলের অন্দরে প্রয়োজনের সময় জানিয়ে দেবেন, বলে রেখেছেন।
কংগ্রেস না বিজেপি, কে বড় শক্র এই প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে বিতর্ক আবহমান কালের! এখন লোকসভা নির্বাচনের মুখে এসে সেই তর্ক ফের প্রাসঙ্গিক হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বেও যখন এই প্রশ্নে বিভাজন রয়েছে, সেই সময়েই ভি এসের অবস্থান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে সিপিএমের একাংশ। কংগ্রেসের থেকে বিজেপি-কে বড় শক্র ধরে নিয়ে এগোনোর কথা এত দিন বেশি করে বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নেতারা। কারণ, কংগ্রেসের প্রতি তুলনামূলক নরম মনোভাব দেখিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের বিভাজন বাধিয়ে রাখতে পারলে আলিমুদ্দিনের লাভ হয়। কংগ্রেস-শাসিত একটি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এসের অবস্থান এই প্রেক্ষিতে নতুন মাত্রা নিয়ে এল। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মতে, “কেরলে বামেদের মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই। সেই রাজ্যে রাজনীতি করেও ভি এস এই কথা বলছেন মানে বৃহত্তর প্রশ্ন বিবেচনা করেই বলছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে বলছেন। তাঁর মতকে নিঃসন্দেহে গুরুত্ব দিতেই হবে!”
প্রকাশ কারাটদের কাছে অবশ্য এখন শিরঃপীড়া বাড়াতে পারে ভি এসের এই মত। কারণ, কেরল সিপিএমের বড় অংশই কট্টর কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থানের পক্ষে। দলের মধ্যে তারা ভি এসের মতকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারে। এবং তার প্রতিক্রিয়ায় দলে ফের জটিলতাও বাড়তে পারে! ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলের কেরল-কাজিয়া নিয়ে গঠিত ৬ সদস্যের পলিটব্যুরো কমিশন কোনও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করলে তার পাশাপাশিই কংগ্রেস-প্রশ্ন এসে পড়ে কী পরিস্থিতি তৈরি করবে, ভেবে প্রমাদই গুণছেন দলের একাংশ!
কৌশলগত বিতর্ক, কেরলের কাজিয়ার সমান্তরালে সিপিএমের জন্য আবার নতুন বিড়ম্বনা তৈরি করে ফেলেছে ত্রিপুরার ঘটনা। দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যে সিপিএমের মূলধন স্বচ্ছতা ও সততার ভাবমূর্তিই। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যার মুখ। সেই রাজ্যেই টাকার বান্ডিলে শুয়ে এবং মাথায়-বুকে নোটের তাড়া সমেত ছবিতে উঠে এসে বহিষ্কৃত হয়েছেন আগরতলা শহরতলির এক লোকাল কমিটি সদস্য সমর আচার্য! মানিকবাবু অবশ্য এ ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থারই পক্ষপাতী ছিলেন। দলের নিয়ম মেনে অভিযুক্ত নেতাকে ডেকে তাঁর ব্যাখ্যাও শোনা হয়েছিল। ঘটনা দলের বিরাট ক্ষতি করছে দেখে ওই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয় আখ্যা দিয়ে তড়িঘড়ি তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অস্বস্তি তাতে কাটছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “কাজটি যিনি করছেন, তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই! তিনি স্থানীয় স্তরের নেতাও বটে। কিন্তু আগরতলায় এই প্রথম যখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হতে যাচ্ছে, তার আগে ঘটনাটায় দলের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লেগেছে।” |
পুরনো খবর: পুরনো-নতুনের দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে সিপিএমকে |
|
|
|
|
|