|
|
|
|
গোলাগুলি চলছেই, ভয়ে ঘরছাড়া বহু বাসিন্দা
সাবির ইবন ইউসুফ • শ্রীনগর |
বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে বাবা-মা-বউকে নিয়ে সেই এক মাস আগে ঘর ছেড়েছেন কুলিয়ান-সুচেতপুরের আয়ুব। তার পর থেকে জম্মুর রেল স্টেশনই তাঁদের ঘরবাড়ি। শুধু আয়ুবই নন, জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রায় ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের অবস্থা এ রকমই।
তিন মাস হতে চলল প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষবিরতি লঙ্খন করে গুলিচালনার অভিযোগ উঠছে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবারই পাক সেনার গুলিতে এক ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। মর্টারের শেল ফেটে অনেক গ্রামবাসীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য এই গুলিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এজাজ চৌধুরীর পাল্টা দাবি, ভারতের গুলিচালনার প্রত্যুত্তরেই শুধু গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান। তাদের তরফে কোনও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করা হয়নি। বরং চৌধুরীর মতে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখারই পক্ষপাতী পাকিস্তান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত কালই দু’দেশের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর প্রস্তাব দেয় বিএসএফ। কিন্তু সেই বৈঠক কার্যকরী হয়নি। |
|
ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে। রবিবার জম্মুর কুলিয়ান- সুচেতপুরের ছবি। ছবি: এএফপি। |
ইতিমধ্যে এ দিনই চার দিনের সফরে আমেরিকা পৌঁছেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বুধবার বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা তাঁর। এই বৈঠকের আগে নওয়াজ আজ কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আমেরিকার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেন, “১৯৯৯ সালের জুলাইয়েও আমি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনকে এ নিয়ে অনুরোধ করেছিলাম। এ বারও আমার একই অনুরোধ।” আমেরিকা অবশ্য বরাবরের মতোই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ। রবিবার বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদও জানিয়ে দেন কাশ্মীর প্রশ্নে আমেরিকার হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না ভারত।
গত মাসে নওয়াজের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। পাক সেনার একের পর এক সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন সত্ত্বেও ভারতের মন্তব্য ছিল, আলোচনার মাধ্যমেই দু’দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন সম্ভব। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঘটনার পরে মুখ খুলতে বাধ্য হয় ভারত। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখতে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার। তিনি বলেন, “এটা শুধুমাত্র কূটনীতির বিষয় নয়। এতে জড়িয়ে আছে সামরিক সম্পর্কের প্রশ্নও।” রবিবারই পাকিস্তানের তরফে জানানো হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার বৈঠকে বসবেন দু’দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও)। কিন্তু ভারত এই খবর অস্বীকার করেছে। বরং ভারতের তরফে দাবি করা হয়েছে, সংঘর্ষবিরতি মানতে আদৌ আগ্রহী নয় পাকিস্তান।
দু’পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গ্রামের বাসিন্দাদের। তিন মাস ধরে বন্ধ জম্মুর অন্তত ৩৫টা স্কুল। কয়েকটা স্কুলকে সাময়িক ভাবে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের পঠনপাঠন পুরোপুরি বন্ধ। ছাত্রছাত্রীরা কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তার খোঁজ নেই। জম্মু পুলিশের ডিভিশনাল কমিশনার শান্তমন্নু বলেন, “সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ। স্কুল বন্ধ। গুলিবর্ষণের জেরে বাইরেও বেরোতে পারছে না। সবার পক্ষে অন্য জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” ২২ অক্টোবর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে।
নজওয়ালের বাসিন্দা বলবন্ত সিংহ বলেন, “আমাদের এলাকায় মাঝেমধ্যেই দু’তরফের সেনার গুলিচালনার খবর শুনতে পেতাম। কিন্তু চার সপ্তাহ আগে ওপার থেকে এমন গোলাগুলি চলতে লাগল গত ১০ বছরে আমরা দেখিনি।” ওই গ্রামেরই বাসিন্দা পরমানন্দের অভিযোগ, “মাঠে কয়েক বছর ধরেই চাষ শুরু করেছিলাম। এ বারও চাষ করেছিলাম। ফসল পেকেও গিয়েছে। কিন্তু ভয়ে ফসল তুলতে পারছি না।” মাঠে কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী পাক সেনার গুলির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও জানালেন পরমানন্দ। “আমার চোখের সামনেই মর্টারের শেল ফেটে চার জন আহত হল। সরকার কেন আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না,” মন্তব্য ক্ষুব্ধ পরমানন্দের। |
পুরনো খবর: ফের সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন |
|
|
|
|
|