|
|
|
|
শিল্পের আস্থা জয়ে আসরে মনমোহনই
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিরোধীরা যাঁর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে, তিনিই সরকারের স্বচ্ছতার মুখ। ফলে তাঁকেই সামনে রেখে এ বার কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিরোধী আক্রমণের ঝড় রোখার কৌশল নিল কংগ্রেস ও তার সরকার। রাশিয়া থেকে দেশে ফিরেই শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট। এবং সংখ্যায় তিনটি। এক, কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে তদন্তের জেরে যেন চিড় না ধরে শিল্পমহলের আস্থায়। দুই, নতুন করে যেন মেঘ না জমে দেশের বিনিয়োগ-সম্ভাবনার আকাশে। আর তিন, দুর্নীতির প্রশ্নে সরকারকে বিঁধে যেন লোকসভা ভোটে ফায়দা না লুটতে পারে বিরোধীরা।
কয়লা কেলেঙ্কারিতে কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে গত কালই প্রথম মুখ খুলেছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। এ ব্যাপারে বিরোধীরা যখন মনমোহনের গায়ে কালি ছেটাতে তৎপর, তখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, খনি বণ্টনে কোনও অনিয়মই হয়নি। এর ২৪ ঘণ্টা পর আজ আবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাশিয়া থেকে ফিরেই এ বিষয়ে শিল্পকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, মাঝের এই সময়টুকুকেও শিল্পমহলের আস্থা অর্জনের কাজে ব্যবহার করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিজে বৈঠকে বসার আগে এখনই শিল্পকর্তাদের সঙ্গে ঘরোয়া ভাবে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মনমোহন। এ কাজের ভার দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী আনন্দ শর্মা ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথকে।
কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, শিল্পমহলের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখাটা সরকার ও দলের পক্ষে খুবই জরুরি। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের আগে। সরকার ও দল একই সঙ্গে কৌশলে এই বার্তাও দিতে চাইছে যে, কয়লা খনির ব্লক বণ্টনে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিরোধীরা যে প্রচার চালাচ্ছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য আজ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এই ভাবে: প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সচিবালয় এ ব্যাপারে নীরব থাকলে দলের ক্ষতিই হচ্ছিল। ভোটের আগে তাতে জনমনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে উঠছিল যে খনি বণ্টনে সত্যিই দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সততা প্রশ্নাতীত। ফলে তিনি বা তাঁর দফতর জোরালো ভাবে অভিযোগ খণ্ডন করলে সেটা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে বলেই মনে করছেন কগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের ওই নেতার মতে, শিল্পমহলই কার্যত প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রত্যয় দেখানোর সুযোগটা করে দিয়েছে। কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর দায়ের করার পর শিল্পকর্তারা একযোগে সরব হয়েছেন। ইনফোসিসের প্রধান নারায়ণমূর্তি থেকে শুরু করে এইচডিএফসি কর্তা দীপক পারেখ সকলেই কুমারমঙ্গলম বিড়লার মর্যাদা ও সততার কথা তুলে ধরে সিবিআই তদন্তের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন করছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এতে মনমোহনের অবস্থানও দৃঢ় হয়েছে।
শিল্পকর্তাদের এই প্রতিবাদে বিজেপি-র আক্রমণও ভোঁতা হয়েছে খানিকটা। কারণ, এখনও হিন্দালকোকে খনির ব্লক দেওয়াকে দুর্নীতি বলে প্রচার করে গেলে শিল্পমহল বিজেপি-র ওপরেই চটবে। লোকসভা ভোটের আগে সেটা তাদের পক্ষে ঝুঁকি হতে পারে। মূলত এই সমীকরণটাকে মাথায় রেখেই, শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে বিরোধীদের, বিশেষ করে বিজেপি-র ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেসের এই কৌশল বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্বের। তাই কয়লা কেলেঙ্কারির প্রশ্নে বিজেপি-ও কৌশল বদলাতে শুরু করেছে। দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, “কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে এই প্রথম ব্যাখা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা-ও কুমারমঙ্গলম বিড়লার মতো মর্যাদাসম্পন্ন শিল্পপতি কিংবা পি সি পারেখের মতো প্রাক্তন আমলার বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর। কিন্তু খনি বণ্টনের ঘটনায় আরও তো ১৪টি এফআইআর দায়ের হয়ে রয়েছে। সেগুলির ব্যাপারে কবে ব্যাখ্যা দেবেন প্রধানমন্ত্রী?” বিজেপি সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে কংগ্রেস ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার থামানোর প্রশ্নই নেই। বরং এ ব্যাপারে তদন্তে সিবিআই আদালতকে আর কী কী জানায় তারই অপেক্ষা করা হচ্ছে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত কত দূর এগিয়েছে সে ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করার কথা সিবিআই-এর। ২২ অক্টোবর তা হতে পারে।
কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, লোকভা ভোটের মাত্রই ক’মাস বাকি। এই অবস্থায় সিবিআই কী রিপোর্ট দিচ্ছে তাতে আর আমল দেওয়া হবে না আদৌ। বরং সরাসরি ও জোরালো ভাবে সব অভিযোগ খণ্ডন করে যাবে দল ও সরকার। দলের একাধিক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে তদন্ত ও সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা আগামী ছ’মাস তথা লোকসভা ভোটের আগে শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে সেই তদন্ত ও মামলায় কী হচ্ছে না-হচ্ছে তা নিয়ে এখন থেকেই গুটিয়ে থাকলে চলবে না। বরং দৃঢ় ভাবে এর বিরোধিতা করাই রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা হবে। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ ব্যাপারে মুখ খোলার পর জোরালো ভাবে সেটাই করছেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা। সিবিআই-এর আনা অভিযোগ নস্যাৎ করতে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ উভয়েই আজ দাবি করেন, খনি বণ্টনের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল হয়নি। বরং সিবিআই যে ভাবে এফআইআর দায়ের করেছে, তাতে দেশে বিনিয়োগের বাতাবরণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মনটেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মন্তব্য, হিন্দালকোকে খনি বণ্টনের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঠিক ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সেই সিদ্ধান্তকে আমিও সমর্থন করি। |
পুরনো খবর: বিড়লাকে খনি নিয়ম মেনেই, জানাল প্রধানমন্ত্রীর দফতর |
|
|
|
|
|