|
|
|
|
বিড়লাকে খনি নিয়ম মেনেই, জানাল প্রধানমন্ত্রীর দফতর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কয়লা কেলেঙ্কারিতে কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলল প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। আজ এক বিবৃতিতে পিএমও জানিয়েছে, বিড়লার সংস্থা হিন্দালকোকে কয়লাখনি দেওয়ার পিছনে কোনও দুর্নীতি বা অনিয়ম নেই।
ওড়িশার তালাবিরা খনি থেকে হিন্দালকোকে কয়লা তোলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও এই ক্ষেত্রে তারা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে কাজ করছে। ফলে তাদের ওপরে পিএমও-র প্রভাবও এই মুহূর্তে কম। এই পরিস্থিতিতে তাদের এ দিনের বিবৃতি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি কয়লা কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নাম আরও বেশি করে জড়িয়েছিলেন প্রাক্তন কয়লা সচিব পি সি পারেখ। কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে যে এফআইআর করা হয়, সেখানে ছিল পারেখের নামও। পরে পারেখ সাফ জানান, তাঁকে যদি ষড়যন্ত্রী বলে সিবিআই, তা হলে তো সেই অভিযুক্তের তালিকায় প্রথম নামটা হওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীরই। কারণ, তখন তিনিই কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন।
মনে করা হচ্ছে, এ দিন বিবৃতি দিয়ে দুই পাখি মারার চেষ্টা করল পিএমও। এক দিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপরে থেকে অভিযোগের ছায়া সরাতে চাইল। স্পষ্ট করে দিতে চাইল, হিন্দালকোকে বরাত দেওয়ার মধ্যে কোনও গোলমাল নেই। অন্য দিকে, কুমারমঙ্গলমকে কার্যত ‘ক্লিন চিট’ দিয়ে বার্তা দেওয়া হল শিল্পমহলকেও। কারণ, বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ মনমোহন সিংহ, রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও। তত ক্ষণে কুমারমঙ্গলমের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে গোটা শিল্পমহল। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, সিবিআইয়ের অতিসক্রিয়তা শিল্পমহলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আরও তিক্ত করে দিতে পারে। এমনিতেই লোকসভা ভোটের আগে শিল্পমহলের একাংশ নরেন্দ্র মোদীতে মজেছেন। তার উপরে এই ঘটনা বিষফোঁড়ার মতো না হয়ে দাঁড়ায়!
সে জন্যই দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে নেমেছে কংগ্রেস তথা কেন্দ্রীয় সরকার। শিল্পমহলের উষ্মা প্রশমনে নামেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা ও সচিন পায়লট। গত কাল কুমারমঙ্গলমের সঙ্গে বৈঠক করেন চিদম্বরম। এর পরে পিএমও থেকে বিবৃতির মাধ্যমে বার্তা দিতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রীও। কংগ্রেসের একাংশের ধারণা, সিবিআই যে হেতু সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত করছে, তাই তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এর আগে কয়লা কেলেঙ্কারির ফাইল চেয়ে পাঠিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। তাই এ বারে আর কোনও বিতর্ক তৈরি করতে চায়নি পিএমও। তারা জানিয়েছে, সিবিআইয়ের তদন্তে কেন্দ্র কোনও হস্তক্ষেপ করছে না। তারা তদন্ত করে দেখুক। তবে তা বলে নিজের অবস্থানও জানাতে ভোলেনি পিএমও। যাতে বোঝা যায়, কুমারমঙ্গলম তো বটেই প্রধানমন্ত্রী শিল্পমহলের সঙ্গেও সম্পর্ক ঠিক করতে আগ্রহী।
দাগি সাংসদদের নিয়ে অর্ডিন্যান্স প্রসঙ্গে রাহুল গাঁধীর মন্তব্যে বিপাকে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন তিনি আমেরিকায় ছিলেন। আগামিকাল রাশিয়া যাচ্ছেন মনমোহন। অনেকের ধারণা, এ বার তার আগেই বিবৃতি দিয়ে বিতর্ক শেষ করে দিতে চেয়েছে পিএমও। যাতে বিদেশে থাকার সময়ে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় মনমোহনকে।
কয়লাখনি বণ্টনের দায়িত্বে রয়েছে একটি স্ক্রিনিং কমিটি। সিবিআইয়ের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রথমে তালাবিরা খনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাতে হিন্দালকোকে অংশীদার করা হয়। তাতে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নেভেলি লিগনাইট কর্পোরেশন।
স্ক্রিনিং কমিটি যে প্রথমে তালাবিরা খনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, তা মেনে নিয়েছে পিএমও। পরে যে সিদ্ধান্ত বদল করে হিন্দালকোকে ওই খনির অংশীদার করা হয়, তা-ও স্বীকার করেছে তারা। তবে তাদের দাবি, তাতে কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। নেভেলি লিগনাইট কর্পোরেশন বঞ্চিতও হয়নি। নিজের অ্যালুমিনিয়াম কারখানার জন্য তালাবিরা-১ ও ২ নং খনি চেয়েছিলেন কুমারমঙ্গলম বিড়লা। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লেখেন তিনি।
ওড়িশা সরকারও জানায়, বিড়লার কারখানায় নেভেলি কর্পোরেশনের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পরে স্থির করা হয়, হিন্দালকো ও দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার যৌথ উদ্যোগে গঠিত কোম্পানিকে তালাবিরা খনি দেওয়া হবে।
কংগ্রেসের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, আজ ফের তার ইঙ্গিত দিয়েছে শিল্পমহল। আজও বেদান্ত গোষ্ঠীর কর্ণধার অনিল অগ্রবাল দাবি করেন, “ওই ঘটনার পরে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাসভবনে এক নৈশভোজে হাজির ছিলাম। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।”
|
পুরনো খবর: শিল্পমহলকে বার্তা দিয়ে বিড়লার পাশেই সরকার |
|
|
|
|
|