|
|
|
|
ভোট প্রচারে ব্যান্ডের গান বন্ধের
হুলিয়া,
ক্ষুব্ধ মিজোরামের শিল্পীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যে নামছে। চাম্পাই শহরের এক প্রান্তের বাজারে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি। সামনে ভিড়ও জমেছে কিছুটা। অধীর আগ্রহে কারও জন্যে অপেক্ষা করছেন সকলে। তখনই ঘোষণা হল—‘এ বার আপনাদের সামনে হাজির হচ্ছেন ভানলালসাইলোভা।’ তুমুল হাততালি উঠল ভিড়ে। গিটার নিয়ে মঞ্চে উঠেই গান ধরলেন জনপ্রিয় গায়ক ভানলাল, “জোরাম টাং ফান ফান....” ব্যান্ডের অনুষ্ঠান নয়, এটাই ছিল মিজোরামের ভোট প্রচারের ছবি!
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য শুনতে বেশি লোক জড়ো হন না কখনই। তাই ভোটারদের টানতে, গায়ক-বাদকদের প্রচারসভায় নিয়ে যেত রাজনৈতিক দলগুলি। মিজোরামের ভোট-প্রচারের রীতি ছিল এমনই। ভোটের আগে প্রচার মানেই ব্যান্ডের অনুষ্ঠান। একইসঙ্গে বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে ভোটারদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার ‘প্রথা’ও ছিল। ভোটপ্রার্থীদের ‘চাঁদা’য় গ্রাম-শহরে শুয়োরের মাংস দিয়ে পানভোজনের ব্যবস্থাও হতো।
কিন্তু, এ সবে আপত্তি তোলে গির্জা। গির্জার নির্দেশে গতবারের নির্বাচন থেকে বাড়ি-বাড়ি প্রচার, পানভোজন বন্ধ। আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে এ বার ব্যান্ডের গান বন্ধের হুলিয়া জারি করল গির্জার মদতপুষ্ট ‘মিজোরাম পিপল্স ফোরাম’। সংগঠনটি বলেছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে ভোট প্রচার, নির্বাচনী সভায় গান-বাজনা চলবে না। এমন নির্দেশে ক্ষুব্ধ শিল্পী-কলাকুশলীরা।
রাজ্যের ভোটে প্রার্থীদের চেয়েও বেশি ব্যস্ত থাকেন শিল্পীরাই। প্রার্থী ব্যস্ত থাকেন শুধুমাত্র নিজের কেন্দ্র নিয়েই। টাকা পেলে যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সভায় হাজির হয়ে যান মিজো শিল্পীরা। বছরভর সেখানে গানের অনুষ্ঠানের সংখ্যা হাতেগোণা। রোজগারও সে ভাবে হয় না। ভোটের আগেই গায়ক-বাদকদের চাহিদা বেড়ে যায়। ‘লাইভ কনসার্ট’ শুধু নয়, রাজনৈতিক দলগুলি ‘মিউজিক অ্যালবাম’ও তৈরি করে। জনসভা, দলীয় কার্যালয়ে বাজানো হয় ওই গানগুলি। গানেই দলের আদর্শ, কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
এ বার গির্জা ও এমপিএফ-এর কড়া নির্দেশ, ভোট প্রচারে শব্দদূষণ, টাকা ছড়ানো একেবারেই চলবে না। বাজানো যাবে না লাউডস্পিকার। খ্রিস্টান-অধ্যুষিত মিজোরামে গির্জার আদেশ অমান্য করার ঝুঁকি নেয় না কোনও রাজনৈতিক দলই। গত বার বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার বন্ধ হওয়ায় কংগ্রেস, এমএনএফ নতুন পদ্ধতি নিয়েছিল। এসএমএস-এর মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছিল দলের বার্তা। ভোটারদের মধ্যে মোবাইল ফোনও বিলি করা হয়। কিন্তু সে সব হয়েছে গির্জার চোখের আড়ালে। শব্দদূষণ বন্ধের পাশাপাশি এ বার দৃশ্যদূষণ রোধে পোস্টার, হোর্ডিং-এর আকারও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেএমপিএফ। প্রার্থী প্রতি লিফলেট বিলির সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে এমপিএফ-এর সঙ্গে বৈঠকে বসে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দল। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে ২৭ দফা চুক্তিও হয়েছে।
ভোটপ্রচারের মঞ্চে গান বন্ধের হুলিয়ার কথা ছড়াতেই, গায়ক-বাদকদের সংগঠন ‘মিজো জিয়ামি ইনজাওমখাওম’ প্রতিবাদ জানিয়েছে। গির্জার কাছে ওই নির্দেশ প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছে সংগঠনটি। সেটির বক্তব্য, ৫ বছরের ব্যবধানে বিধানসভা নির্বাচন তাঁদের রোজগারের অন্যতম মাধ্যম। সে সুযোগ যেন কেড়ে নেওয়া না-হয়। সংগঠনটি বলেছে, গান-বাজনা কখনওই শব্দ দূষণ করে না। মানুষের কাছে সঙ্গীতের আবেদন রয়েছে বলেই শিল্পীদের কদর রয়েছে।‘মিজো পিপ্লস ফোরাম’-এর সভাপতি রেভারেন্ড লিয়ানমিংগি পাচাউ জানান, শব্দ এবং দৃশ্য দূষণের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়া হলেও, গায়কদের বিরুদ্ধে কোনও হুলিয়া জারি হয়নি। ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়া হবে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, ভোটের আগে কোনও ধরনের গুজব ছড়ানো, অপপ্রচার, সংবেদনশীল রটনা রুখতে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নজর রাখা হবে। |
|
|
|
|
|