এমএএমসি
আবাসনের জন্য জমা টাকা পেল এডিডিএ
ক দশকের আইনি টানাপোড়েন শেষে লিক্যুইডেটরের থেকে এমএএমসি আবাসনের ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ বাবদ জমা অর্থের কিছুটা পেল আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। গত ৯ অক্টোবর লিক্যুইডেটরের তরফে প্রায় এক কোটি ২৯ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে বলে এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এমএএমসি কারখানা চালু হয় ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে। খনির কাজে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি তৈরি হত এই কারখানায়। ১৯৯২ সালে কারখানাটি বিআইএফআর-এ চলে যায়। পাকাপাকি ভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যায় ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি। কারখানার প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর নেন। সিটুর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের ২৪ জুন আদালত কারখানা ও কারখানার আবাসন এলাকা পৃথক করে দেয়। সেই বছর ১ জুলাই রাজ্য সরকারের মাধ্যমে আবাসন এলাকার দায়িত্ব পায় এডিডিএ। প্রতি বর্গফুট ১ টাকা হারে ভাড়া ঠিক করে দেয় এডিডিএ। কিন্তু প্রায় ২৩০০ বৈধ আবাসিকের অধিকাংশই ভাড়া দিতে রাজি হননি। কারণ, কারখানার কাছে তাঁদের বকেয়া পাওনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, তৎকালীন এমএএমসি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৯ সালের ৩ জুন আবাসন সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেন। সেখানে বলা হয়, আবাসনে থাকতে গেলে শ্রমিক-কর্মীদের আবাসনের সেই সময়ের মূল্যের ৮০ শতাংশ জমা রাখতে হবে। তা না হলে আবাসন ছাড়তে হবে। সেই নির্দেশিকা হিসেবে, আবাসনের প্রকৃতি অনুযায়ী ৬৫ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা নেওয়া হয় শ্রমিক-কর্মীদের কাছ থেকে। কারখানার দায়িত্ব লিক্যুইডেটরের হাতে চলে যাওয়ার পরে এই অর্থও যায় লিক্যুইডেটরের হাতেই।
এ দিকে, শ্রমিক-কর্মীরা ভাড়া, পুরকর ইত্যাদি দিতে না চাওয়ায় টাউনশিপের নানা উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল। সমস্যা মেটাতে এডিডিএ, দুর্গাপুর পুরসভা ও আবাসিক সংগঠনগুলি বারবার বৈঠক করে। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঠিক হয়, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ বাবদ অর্থ ডিপিএল-কে দেবেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বৈধ আবাসিকেরা আবাসনের মালিকানা পাবেন।
টাকা হস্তান্তর
• ১৯৯৯ সালে কারখানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা,
আবাসনের সেই সময়ের মূল্যের ৮০ শতাংশ জমা রাখতে হবে আবাসিকদের।
• কারখানা লিক্যুইডেটরের হাতে গেলে সেই টাকাও তাদের হাতে চলে যায়।
• সম্প্রতি কোর্টের নির্দেশ, টাকা যাবে এডিডিএ-র হাতে।
• প্রায় এক কোটি ২৯ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে এডিডিএ-কে।
২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট তা অনুমোদন করে। ঠিক হয়, আবাসিকেরা ৯৯৯ বছরের জন্য ‘লিজ’ পাবেন। ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি বর্গ ফুটে ১ টাকা হিসেবে মোট ভাড়ার ১৫ শতাংশ দিতে হবে আবাসিককে। লিক্যুইডেটরের কাছে যাঁদের বকেয়া পাওনা রয়েছে তাঁদের তা দিতে হবে না। বকেয়া থেকে তাঁদের এই টাকা কেটে নেওয়া হবে। এ ছাড়া আবাসিকেরা নিয়মিত পুরকর দেবেন। ইতিমধ্যে ১৪৮৭ জন আবাসিকের লিজ সংক্রান্ত কাগজপত্র চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বাকি হাজারখানেকের জন্য প্রক্রিয়া চলছে বলে এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। লিক্যুইডেটরের হাত থেকে অর্থ কী ভাবে এডিডিএ-র হাতে আসবে, তা নিয়ে চাপান-উতোর ছিল। সম্প্রতি তা মিটে যাওয়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন এমএএমসি-র প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরা। গত ৫ অগস্ট ও ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট লিক্যুইডেটরকে নির্দেশ দেয়, আবাসিকদের সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ জমা অর্থ এডিডিএ-র হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক দশক আগে শ্রমিক-কর্মীদের আবাসনের জন্য জমা রাখা সিকিউরিটি ডিপোজিট রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় একশো কোটি টাকায়, খবর এডিডিএ সূত্রে।
এর বাইরে ৫৭৬ জনের অর্থ জমা রাখা ছিল ডাকঘরের নানা সঞ্চয় প্রকল্পে। মূলত ডাকঘরে জমা রাখা সেই অর্থই প্রথম ধাপে এডিডিএ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি এক লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৩৩ জন আবাসিকের জমা অর্থ সরাসরি ছিল লিক্যুইডেটরের হাতেই। সেই ৩৩ জনের ২৬ লক্ষ ৬৯ হাজার সাতশো টাকাও এডিডিএ-র হাতে লিক্যুইডেটরের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। আবাসিকদের পক্ষে ‘এমএএমসি টাউনশিপ আবাসিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা কেটে গেল।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.