‘ভুতুড়ে’ গোলের জোরে শনিবার ভোর রাতে বুন্দেশলিগার ম্যাচে বেয়ার লেভারকুসেন উতরে গেলেও, আই লিগের প্রথম হোম ম্যাচে ‘ভুতের আশীর্বাদ’ জুটল না মোহনবাগানের!
রেম নেকার এরিনায় সাইড নেট ছিঁড়ে স্টেফান কিসলিংয়ের গোলটা রেফারি দেখতে না পেলেও, যুবভারতীতে কাতসুমির ‘ভুতুড়ে’ গোলটা কেরলের রেফারি সন্তোষ কুমারের চোখ এড়ালো না। এড়ালে হয়তো ঘরের মাঠে মুরান্ডা-ডেনসনদের এতটা বেইজ্জত হতে হত না। করিম বেঞ্চারিফাও হতাশার সব বাঁধ ভেঙে দিতেন না!
চব্বিশ ঘণ্টা আগে যে কোচ দলের মনোবল বাড়ানোর জন্য ফুটবলারদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মজেছিলেন, শনিবার ম্যাচ শেষ হতেই তাঁর মুখে বিসর্জনের সুর, “এই ভাবে চলতে থাকলে আমাকে সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবতে হবে। আমি জেনেশুনেই মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু সাফল্য দিতে না পারলে অযথা কোচের পদ আকঁড়ে ধরে বসে থাকার কোনও মানে হয় না।” গ্যালারি থেকে এত দিন যে কটূক্তি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, জুতো দেখানো মরসুমের শেষ পর্বের জন্য তুলে রাখা থাকত, সেটা এখন শুরুতেই সহ্য করতে হচ্ছে করিমকে। ভারতে তাঁর লম্বা কোচিং কেরিয়ারে আগে যা কখনও ঘটেনি!
তবে স্বেচ্ছায় বিষ পান করার দায় অন্যদের উপর চাপানো যায় কি? করিমও পারলেন না, “কোনও অজুহাত দিতে চাই না। দলের এই বেহাল অবস্থার জন্য পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি আমি।” ফুটবল বিশ্বের নিয়ম মানলে, করিমকে অনায়াসে ‘অপরাধী’ ঘোষণা করে দেওয়া যেতে পারে। হাতে দু’মাস সময় পেয়েও এখনও প্রথম এগারো তৈরি করতে পারেননি। রাম মালিক, জাকির কিংবা ওয়াহিদের মতো তরুণ ফুটবলাররা মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠলেও, ধারাবাহিকতার ভীষণ অভাব। কোনও উইং প্লে নেই, সাইড ব্যাকের সাপোর্টিংও বা কোথায়? এত দুর্বল মোহনবাগান টিম সাম্প্রতিককালে দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ! |
বিরক্ত করিম। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।
|
আই লিগে টানা তিন ম্যাচ জয়হীন থাকার পরে শনিবার ঘরের মাঠে প্রথম তিন পয়েন্ট তোলার আশায় ছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু যে ফুটবল ‘উপহার’ দিলেন আইবর-সন্দীপ নন্দীরা, তা দেখে স্পোর্টিংয়েরই হোম ম্যাচ মনে হচ্ছিল। করিমের ৪-১-৩-২ ছকে কাতসুমি ছিলেন ‘ফ্রি’ প্লেয়ার। স্পোর্টিং কোচ অস্কার ব্রুজোন শুরুতেই কালু-গার্সিয়া-প্রত্যেশকে দিয়ে ত্রিভুজ বানিয়ে মোহনবাগানের জাপানি মিডিওকে বোতলবন্দি করে ফেললেন। নিট ফল, ফরোয়ার্ডে মুরান্ডা-সাবিথের জন্য বল বাড়ানোর লোকও রইল না। আবার মাঝমাঠে পাস খেলার রাস্তাও বন্ধ। উলটে ফুটবলারদের মধ্যে যেটুকু বোঝাপড়া শুরুর পনেরো মিনিট দেখা যাচ্ছিল, সেটাও ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেল।
স্পোর্টিংয়ের প্রথম গোল এই টানাপোড়েনেই। বাগান-মাঝমাঠের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ‘ডাউন দ্য মিডল’ ১-০ বৈমা কারপের। মজার ব্যাপার হল, এক জন আদর্শ দেহরক্ষকের মতো বৈমাকে গোল পর্যন্ত ‘নিরাপদে’ পৌছে দিলেন বাগানের প্রধান স্টপার আইবর। ট্যাকল করা তো দূরের কথা, কোনও রকম আটকানোর চেষ্টাও করলেন না। বৈমার দ্বিতীয় গোলটাকে প্রথম গোলটার ‘অ্যাকশন রিপ্লে’ বলা যেতে পারে। শুধু পার্থক্য, আইবরের পরিবর্তে এ বার বাগান-ডিফেন্সের গুরুদায়িত্বে ছিলেন করিমের প্রিয় ফুটবলার রাউইলসন রডরিগেজ। দু’টো গোলে অবশ্য সন্দীপ নন্দীও সমান ভাবে দায়ী। জাতীয় দলের গোলকিপারের আউটিং নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন উঠতেই পারে!
ইচেহীন দলকে জয়ের সন্ধান দিতে আদিল খানকে প্রথম বার ব্লকার হিসেবে নামিয়েছিলেন করিম। হয়তো ভেবেছিলেন নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে খেলবেন! কিন্তু করিম ভাবলেন এক, হল আর এক! নিজেদের বক্সের সামনে কালু-গার্সিয়ারা অনায়াসে ‘ওয়াল প্লে’ করে গেলেন আর আদিল অবাক দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আদিলের বদান্যতায় টিমের রক্ষণ এতটাই দুবর্ল হয়ে পড়ে যে, বিরতির পর তাঁকে আর নামানোর ঝুঁকি নিতে পারেননি করিম। না হলে যে ভাবে মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণে উঠছিলেন কালুরা, তাতে গোলের সংখ্যা আরও বাড়তেও পারত! ম্যাচ শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে মোহনবাগানের ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ পেনাল্টি থেকে মুরান্ডার গোল। গোটা চারেক ওপেন নেট নষ্ট করার পরে মুরান্ডার ‘উপহার’ করিমকে!
মোহনবাগান: সন্দীপ, ওয়াহিদ, কিংশুক, আইবর (রডরিগেজ), রাবিন্দর, ডেনসন, আদিল (মণীশ), জাকির, কাতসুমি, সাবিথ (রাম), মুরান্ডা। |