এক দিকে ফুটবল-প্রজ্ঞা আর অনন্ত অভিজ্ঞতার মণি-সিন্দুক হাট করে খুলে বসেছিলেন ওঁরা। অন্য দিকে, বিশ্রী হারে মুষড়ে পড়া একটা দল সেই সম্পদের পরশ পেয়ে নতুন উদ্দীপনায় প্রতিজ্ঞা নিল“বাইশ অক্টোবর জিততেই হবে।”
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ক্লাস। যেখানে প্রবীণদের দেওয়া জেতার মন্ত্রকে স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহে নিজেদের স্লোগান করে নিলেন নবীনরা‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে হবে। হাল ছাড়া চলবে না।’
এএফসি-র দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামার আগে শনিবাসরীয় বিকেলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব-তাঁবুতে বসে ফালোপা ব্রিগেডকে এ ভাবেই ভোকাল টনিকে তাতিয়ে চনমনে করে দিয়ে গেলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত, নইমুদ্দিনরা। বললেন, “তোমরা ইতিহাস গড়ার থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে। শুধু নিজেদের বা ক্লাবের জন্য নয়, তোমাদের জিততে হবে দেশের জন্য।” যার পরেই চিডি-মেহতাবদের গলায় তেজিয়ান আত্মবিশ্বাস।
এ দিন ভারতের তিন দিকপাল কোচ ছাড়াও শিক্ষকের আসনে ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন তারকারা। এবং তাঁদের আন্তরিক আদানপ্রদান একটু একটু করে লাল-হলুদ ফুটবলারদের মন থেকে মুছে দিল ডেম্পো ম্যাচে জঘন্য হারের যন্ত্রণা আর গ্লানি। নিট ফল, এ দিন সকালের অনুশীলনেও যে ফুটবলাররা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন, বিকেলে তাঁরাও টগবগ করে ফুটছেন। চিডি যেমন বলে গেলেন, “অভিনব ঘটনা। এ রকম আগে কোনও দিন হয়নি। ওঁরা কত সিনিয়র! তাও আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে ক্লাবে এসেছেন। ওঁদের সম্মান রাখতেই আমাদের জিততে হবে। মেহতাব বললেন, “ডেম্পোর কাছে হারটা বড় ধাক্কা ছিল। কিন্তু প্রদীপস্যর, অমলস্যরদের ক্লাস করার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। ২২ অক্টোবর কাজে লাগবে।” |
লাল-হলুদের ক্লাস নিতে একই মঞ্চে অমল দত্ত এবং পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে মার্কোস ফালোপা। শনিবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
|
লাল-হলুদ তাঁবুতে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের যেন মিলনমেলা বসেছিল। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা চিডিদের সঙ্গে যেমন ভাগ করে নিলেন প্রাক্তনরা, তেমনই কঠিন লক্ষ্যে নামার আগে নানা টিপসও দিলেন। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলছিলেন, “ঘরের মাঠে বড় দলের বিরুদ্ধে সব সময় অল আউট যাওয়া উচিত। যত চাপে ফেলবে বিপক্ষকে, ততই মানসিক ভাবে দুর্বল করতে পারবে।” দ্রোণাচার্য কোচ নইমুদ্দিন আবার মেহতাব-অর্ণবদের মনে করিয়ে দিলেন দেশের সম্মানের কথা। “এই লড়াই শুধু মাত্র ক্লাবের নয়। তোমরা দেশের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করছ। দেশের সম্মানের কথা ভেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে জিততেই হবে।” অমল দত্ত আর মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, “কুয়েত কতটা শক্তিশালী ভুলে গিয়ে নিজেদের সেরাটা দাও। জেতার খিদে বাড়াতে হবে। জেতার জেদটা যেন মাঠে নেমে তোমাদের লড়াইয়ে ফুটে বেরোয়।”
ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের এই উদ্যোগে অভিভূত কোচ মার্কোস ফালোপাও। তবে এ দিন সকালে যুবভারতীতে অনুশীলন শুরুর আগে ব্রাজিলীয় কোচও ফুটবলারদের একপ্রস্ত ভোকাল টনিক দেন। মাঠের মধ্যে মেহতাবদের বলে দেন, “আই লিগ আর এএফসি কাপ দু’টি আলাদা টুর্নামেন্ট। তাই ডেম্পো ম্যাচের হারের কথা মনে না রেখে ২২ অক্টোবরের জন্য নিজেদের ফোকাস করো।”
লাল-হলুদ কিপারদের আবার আলাদা করে টিপস দিলেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন এই তারকা কিপার বললেন, “গোলকিপাররা কিন্তু পুরো মাঠটা দেখতে পায়। ডিফেন্ডাররাও পেছনে কী ঘটে যাচ্ছে সব সময় দেখতে পায় না। তাই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিফেন্ডারদের বা অন্য ফুটবলারদের নির্দেশ দিতে হবে।” যা শুনে অভিজিৎ বললেন, “আমাদের দায়িত্ব যে কতটা বেশি, তা আরও এক বার ভাস্করদা মনে করিয়ে দিলেন। এটা নিঃসন্দেহে কাজে লাগবে।” ডোপিংয়ের ব্যাপারেও ফুটবলারদের সচেতন করেন ইস্টবেঙ্গলের সহ-সচিব চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। এ দিকে ব্যক্তিগত কারণে এই ক্লাসে আসতে পারেননি ওপারা ও জেমস মোগা। এরই মধ্যে সুর কাটল ছোট্ট একটা খবরে। আই লিগে ডেম্পোর বিরুদ্ধে ম্যাচে কল্যাণী স্টেডিয়ামে কিছু লাল-হলুদ সমর্থক পটকা ফাটান। যা নিয়ে ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের ভিত্তিতে ইস্টবেঙ্গলকে কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা করেছে আই লিগ কমিটি।
শনিবার সকালে আবার ইস্টবেঙ্গল দল যুবভারতীতে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে দেখে, গোটা মাঠে পেরেক পড়ে রয়েছে। কোচ আর ফুটবলারদের নিজেদেরই সেই সব পেরেক কুড়িয়ে আগে মাঠ পরিষ্কার করতে হয়। তার পরেই অনুশীলন শুরু করা সম্ভব হয়। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে সাত সকালে মাঠে পেরেক আসল কোথা থেকে? কর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। দলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “এ নিয়ে কিছুই বলার নেই। এখন এ সব ভাবছি না।”
এ দিকে, সরেজমিনে সব প্রস্তুতি খুঁটিয়ে দেখতে কুয়েত এসসি-র দু’জন প্রতিনিধি শনিবার দুপুরেই শহরে চলে এসেছেন। পুরো দল এসে পৌঁছনোর কথা আজ, রবিবার। যুবভারতীতে অনুশীলন করার কথাও রয়েছে কুয়েতের দলটির। |