পুজোর সময় পুরসভার নজরদারি খানিকটা ঢিলেঢালা হতেই শিলিগুড়ি শহরের কয়েকটি এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের রমরমা শুরু হয়েছে। বিধান মার্কেট, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, হিলকার্ট রোড তো বটেই, একাধিক মাছ বাজার, মিষ্টির দোকানেও জবরদস্তি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, কয়েকজন ব্যবসায়ী এতটাই বেপরোয়া যে, ক্রেতাদের কেউ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিতে না চাইলে জবরদস্তি দিচ্ছেন। আশ্রমপাড়া, হায়দরপাড়া, হাকিমপাড়া, সুভাষপল্লি, শান্তিনগর, চম্পাসারির একাধিক এলাকায় কয়েকটি মিষ্টির দোকান থেকে জবরদস্তি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী তো খোলাখুলিই জানিয়ে দিচ্ছেন, পুরবোর্ডের কর্তৃত্ব রাখতেই যে ভাবে নেতারা ব্যস্ত, তাতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান চালানো হবে বলে আর মনে হয় না।
যদিও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “শিলিগুড়ি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত শহর। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, বিরোধীদের মদতে এইসব শুরু করেছে। আমরা কোনওমতেই এটা বরদাস্ত করব না। শীঘ্রই আমরা ফের অভিযান শুরু করব। যারা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিধান মার্কেট এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর নান্টু পালও স্বীকার করেন, এলাকায় বর্তমানে নজরদারির অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি যখন কাউন্সিলর ছিলাম তখন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বর্তমানে ফের চালু হয়েছে। মেয়র কিংবা বরো চেয়ারম্যানকেই বিষয়টি দেখতে হবে।”
শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট সবজি বাজার, বিধান মার্কেট অটো স্ট্যান্ডের একাধিক জায়গায় সন্ধ্যার পর প্রচুর অস্থায়ী দোকান বসে। তাঁদের মধ্যেই অনেকে খোলাখুলি জিলিপি কিংবা সিঙ্গারা বিক্রি করছেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে। হাকিমপাড়ার শান্তি মোড় লাগোয়া এলাকার একটি মিষ্টির দোকান থেকেও খোলাখুলি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে জিনিস দেওয়া হচ্ছে। অথচ সুভাষপল্লিরই একাধিক মিষ্টির দোকান কিন্তু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। শিলিগুড়ির মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের পরিবেশ বাঁচানোর কাজে যাঁরা সহযোগিতা করছেন তা তাঁদের আগামী প্রজন্মের কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে।
ঘটনা হল, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের জন্য একটা সময়ে নিয়মিত অভিযান হতো। ইদানীং সে সব আর হয় না। রোজ নজরদারি করা সম্ভব নয় বলে স্বীকারও করছেন পুরকর্তারা। যেমন পুরসভার ২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান গৌরী দত্ত বলেন, “মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হয়। তবে কেউ লুকিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করলে আমাদের পক্ষে ধরা সম্ভব নয়।”
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ির ব্যবসায়িক সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাসও। তিনি বলেন “শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টা করছে একটি চক্র। পুরসভা কেন বিষয়টি নিয়ে উদাসীন তা বুঝতে পারছি না। যার সঙ্গে শহরের সম্মান জড়িয়ে আছে তা নিয়ে উদাসীনতা মেনে নেওয়া যায় না।” অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্লাস্টিক ক্যরিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করেছেন। নতুন করে যাঁরা তা শুরু করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও বিশ্বজিতবাবু মনে করেন।
|