এক দিকে বাজারে মন্দা। অন্য দিকে ক্রমশ বাড়তে থাকা গাড়ি তৈরির খরচ। এই জোড়া ধাক্কার সঙ্গে যুঝতে উৎসবের মরসুম শুরুর আগেই গাড়ির দাম একদফা বাড়িয়েছিল বেশ কয়েকটি সংস্থা। এ বার এই মরসুম ফুরানোর পরে আরও একবার দাম বাড়ানো হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের।
এত দিন দেখা গিয়েছে উৎসবের মরসুমে সাধারণত গাড়ির বিক্রি বাড়ে। যে কারণে নানা ধরনের আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানার প্রতিযোগিতা চলে সংস্থাগুলির মধ্যে। কিন্তু মূল্যায়ন সংস্থা ইকরা-র হিসাব বলছে, এ বার গাড়ি সংস্থাগুলির দেওয়া ছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গে ১.৫-২% বেড়ে গিয়েছে ক্রেতাদের গাড়ি কেনার খরচও। তার উপর তাদের এটাও আশঙ্কা যে, যাত্রী গাড়ির বাজার এখনই ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং তা মন্দার দিকেই থাকবে। আর এ সবের জেরে উৎসবের মরসুম শেষ হলে গাড়ি সংস্থাগুলির উপর দাম বাড়ানোর একটা চাপ থাকবে বলেই জানিয়েছে ইকরা।
অন্য দিকে, আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে স্বল্পমেয়াদে গাড়ি শিল্প লাভের গুড় খেতে পারবে বলে মনে করছে না আর এক মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস-ও। এমনকী তাদের মতে, আগামী দিনে সুদ কমলেও সে ক্ষেত্রে লাভের লাভ কিছু হবে না। একটি রিপোর্টে তারা বলেই দিয়েছে, সুদের হার কমবে, এই আশায় অক্টোবর-ডিসেম্বরের মধ্যে গাড়ি বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। কারণ সেই একই। প্রায় প্রতি মাসে জ্বালানির দাম বাড়ার দৌলতে বাড়ছে গাড়ি চালানোর খরচ। সাধারণ মানুষের পক্ষে যার ভার বহন করা কঠিন। আর কে-ই বা গাড়ি কিনে তা গ্যারাজে ফেলে রাখতে চায়। ফলে সার্বিক ভাবে কোপ পড়ছে বিক্রিতে। আর লোকসান কমাতে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা সংস্থাগুলির।
বস্তুত, চলতি অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই গাড্ডায় দেশের গাড়ি শিল্প। বাণিজ্যিক গাড়ির বাজার পড়তি ছিলই। কিন্তু সেই সঙ্গে যাত্রী গাড়ির বিক্রিও বেহাল হয়ে পড়ায় এখন রীতিমতো টালমাটাল সংস্থাগুলি। নতুন গাড়ি এনে কিংবা দামে ছাড় দিয়েও শো-রুমে ক্রেতা টানতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। কারণ তা কেনা ও চালানোর খরচ বৃদ্ধি। তাই গাড়ি কেনার শখ থাকলেও, আপাতত সেই ভাবনাকে শিকেয়ে তুলে রাখছেন বহু মানুষ।
সেপ্টেম্বরে শুধু যাত্রী গাড়ির (প্যাসেঞ্জার কার) বিক্রি সামান্য বাড়লেও, সার্বিক ভাবে যাত্রী গাড়ির (প্যাসেঞ্জার ভেহিক্ল) বিক্রি গত বছরের চেয়ে কমেছে ৪.৫%। তবে গত বছরও ‘প্যাসেঞ্জার কার’-এর বিক্রি কমেছিল। কিন্তু প্রায় ৫২% বেড়েছিল বড় যাত্রী গাড়ি (ইউটিলিটি ভেহিকল) বিক্রি। এ বার গত তিন মাসে সেগুলির বিক্রিও এক ধাক্কায় কমেছে অনেকটা। ফলে সব মিলিয়ে ধাক্কা খেয়েছে যাত্রী গাড়ির বাজার। এই অবস্থায় দু’চাকা ও ট্রাক্টরের (বর্ষা ভালো হওয়ায়) বিক্রি অবশ্য বেড়েছে। আর এই ছবিটাই কিছুটা হলেও এখন আশা জোগাচ্ছে গাড়ি শিল্পকে।
|