হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শেয়ার পিছু ২৫.১০ টাকা দর দিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি)।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৬৭.৫ কোটি শেয়ার নিলামে তুলেছিল। তার মধ্যে ১৫.৫ কোটি শেয়ারের মালিকানা অবশ্য বিতর্কিত। কিন্তু ২৫.১০ টাকা দর ধরে যদি সব ক’টি শেয়ারই রাজ্য সরকার বিক্রি করতে পারে, তা হলে তাদের হাতে আসবে ১,৬৯৪.২৫ কোটি টাকা। আর যদি ১৫.৫ কোটি শেয়ার হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যায়, তা হলে রাজ্য সরকার ঘরে তুলবে ১,৩০৫.২০ কোটি টাকা।
ষষ্ঠীর দিন নিলামের উপর যবনিকা পড়েছে। হলদিয়ার শরিকদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর অধিকার রয়েছে এই পুরো শেয়ার নিলামের দরে কিনে নেওয়ার। যদি তারা না কেনে, তা হলে এর উপর অধিকার বর্তাবে ইন্ডিয়ান অয়েলের।
বিক্রির শর্ত অনুযায়ী যে শেয়ার কিনবে, তার কিনতে রাজি হওয়ার দিন থেকে শেয়ার হাতে পাওয়ার দিন পর্যন্ত সংস্থার হওয়া লোকসানের দায়ও তাকেই বহন করতে হবে।
এখন প্রশ্ন ইন্ডিয়ান অয়েল দর হেঁকেছে। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর হাতে সেই দর এবং নিলামের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে চিঠি পৌঁছবে। সেই চিঠি পাওয়ার পরে এক মাসের মধ্যে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে জানাতে হবে তারা এই দরে শেয়ার কিনছে, কি কিনছে না। তা হলে, এই এক মাসের ক্ষতিও কি যে শেয়ার কিনবে, তাকেই বহন করতে হবে?
এ নিয়ে রাজ্য সরকার, ইন্ডিয়ান অয়েল এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠী তিন পক্ষেরই মুখে কুলুপ।
তবে এই সামগ্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ঘোষিত অবস্থান হল, সরকার ১৫.৫ কোটি শেয়ারের মালিকানা আদালতের বিচারাধীন জেনেও তা নিলামে চড়াতে পারে না।
এই পরিস্থিতিতে গোটা লেনদেনটাই আইনি ফাঁস পেরিয়ে কবে সূর্যের আলো দেখবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে। এরই সঙ্গে আছে অবশ্য প্রতিযোগিতা কমিশনের ছাড়পত্র পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। আইন অনুসারে, যে সংস্থাই পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার কিনুক, কেনার পর তাকে অনুমতি নিতে হবে প্রতিযোগিতা (কম্পিটিশন) কমিশনের। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, যে কিনছে আর যে সংস্থার অংশীদারি কেনা হচ্ছে, তাদের যৌথ সম্পদ যদি ১০০ কোটি টাকা পেরিয়ে যায় এবং উৎপাদন মূল্য ৩,০০০ কোটি টাকার উপরে হয়, তা হলে অনুমোদন লাগে কমিশনের। প্রমাণ করতে হয়, আগামী দিনে প্রতিযোগী সংস্থার ব্যবসার পথে অন্যায্য কাঁটা হয়ে উঠবে না এই লেনদেন। আর সেই অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া গড়াতে পারে সাত মাস পর্যন্ত।
তার ফলে হলদিয়া পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার কে কিনবে তা নিয়ে গুমোট কাটলেও, সংস্থার উপরে যে কালো মেঘের ঘনঘটা, তা এখনই কাটছে না।
সংস্থার আথির্ক স্বাস্থ্যও তথৈবচ। হিসাব নিরীক্ষকের মতে সংস্থার ক্ষতি গত অর্থ বছরে দাঁড়িয়েছিল ১,১৪৮ কোটি ৯০ লক্ষের উপরে। গত পাঁচ মাসে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৫০ লক্ষ টাকার লোকসান। গত আর্থিক বছরে সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া হয়েছিল যে নিট সম্পদের ৫০ শতাংশ খেয়ে নিয়েছে ক্ষতি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, খাতায় কলমে শেয়ারের দাম (বুক ভ্যালু) এখন শূন্য। শেয়ার পিছু লোকসান ৬ টাকা।
এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে সবার নজর থাকবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ভূমিকার উপরে। তবে রাজ্য সরকারের বেরিয়ে যাওয়াটা এখন আর শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব। এ বার শরিকি বিবাদ পিছনে ফেলে হলদিয়া পেট্রোকেমও কি অবশেষে ঘুরে দাঁড়াবে? এখন সেটাই দেখার।
|