বাজেট ছিল ৭ হাজার। বেড়েছে দুই হাজার টাকা। ওই বাজেটে কী আর পুজো হয়। তাও যেমন তেমন পুজো নয়। রাজবাড়ির পুজো। রাজা নেই। বিক্রি হয়ে গিয়েছে রাজবাড়িও। ট্রাস্টি বোর্ড ওই পুজো পরিচালনা করে। সামান্য বাজেটে পুজো করা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও ৩০০ বছরের পুরনো রীতি ও ঐতিহ্য মেনে এবারও পুজো হচ্ছে চাঁচলের পাহাড়পুরে। চাঁচল থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুরের ওই পুজোই চাঁচল রাজবাড়ির পুজো বলে পরিচিত। ট্রাস্টি বোর্ডের পর্যবেক্ষক পিনাকীজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বারও স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসেছেন। তা না হলে এ বরাদ্দে পুজো হত না।”
তিনি জানান, পুরনো রীতি মেনে কৃষ্ণ নবমী তিথির দিন থেকে দেবীর আরাধনা শুরু করাই পুজোর রীতি। সেই রীতি মেনে পুজো শুরুও হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন বিকালে চন্ডীপাঠের আসর। দেবী বিসর্জন পর্যন্ত নিয়মিত ওই আসর বসবে। পুজোয় স্বাভাবিক ভাবে জাঁকজমক বা আড়ম্বরের বালাই নেই। নিষ্ঠা, ভক্তি ঐতিহ্যের রাজবাড়ির মন্ডপে হারানো ইতিহাস খুঁজে বেড়ান বাসিন্দারা। রাজবাড়ির দেবী চতুর্ভূজা সিংহ বাহিনী। আলাদা আবেগ ছাড়াও এখানকার মানুষ বিশ্বাস করেন যে, পাহাড়পুর চন্ডী মন্ডপের সিংহবাহিনী দেবী তাঁদের সুরক্ষিত রেখেছেন। রাজবাড়ির উদ্যোগে এই পুজো অবশ্য শুরু হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের সেকসাতন গ্রামে। পরে তা পাহাড়পুরে নিয়ে আসা হয়। ট্রাস্টি বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চন্ডীমন্ডপের উল্টো দিকে সতীঘাট। রাজ পরিবারের এক মহিলা সেখানে স্বামীর চিতায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজার পূর্বপুরুষরা সতীঘাট থেকে অষ্ট ধাতুর তৈরি একটি দেবী প্রতিমা উদ্ধার করেন। তা রাখা হয়েছিল রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে। পরে ওই প্রতিমা অবশ্য খোয়া গিয়েছিল । তার পর একই আদলে অন্য একটি প্রতিমা গড়া হয়। পুরনো প্রথা মেনে সপ্তমীর দিন ভোরে তা ঠাকুরবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়পুরের চন্ডী মন্ডপে। তাঁকে বসানো হয় মৃণ্ময়ী দেবী প্রতিমার পাশে। অষ্টমীর কুমারীপুজোয় গোটা চাঁচলই হাজির হয় পাহাড়পুরে। |