নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার |
ভাত, ডাল, আলুভাজা ভর্তি টিফিন বাক্সকে ঘিরে বোমাতঙ্কের ঘটনা ঘটল আলিপুরদুয়ার শহরে। বৃহস্পতিবার ভোরে মনোজিৎ নাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে আলিপুরদুয়ার-কুমারগ্রাম রোডে একটি পরিত্যক্ত বাজারের ব্যাগেকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিকালে বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা আলিপুরদুয়ারে পৌঁছে ব্যাগের ভিতরে থাকা টিফিন বাক্সটিকে পরীক্ষা শুরু করেন। সেই সময় ওই এলাকা থেকে আরও একটি পরিত্যক্ত টিফিন বাক্স নিয়ে আসেন দমকল কর্মীরা। পরীক্ষার পর বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুটি টিফিন বাক্স ফাটিয়ে দেন। দুটিতেই ডাল ভাত ছিল। একটির মালিকের অবশ্য পরে খোঁজ মেলে। |
তবে পূর্ব অভিজ্ঞতার জেরে পুলিশ কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। দুটি টিফিন বাক্সকেই উদ্ধার করে সাবধানে মাঠে নিয়ে রাখা হয়। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। সমস্ত রকম পরীক্ষার করা হয়েছে। তার পরে দুটি কৌটাই বিস্ফোরণ করে ফাটিয়ে দেওয়া হয়।” উল্লেখ্য, গত ২৯ অগস্ট আলিপুরদুয়ার চৌপথী এলাকায় একটি সাইকেল বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেটিকে বিএম ক্লাব মাঠে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। তবে তা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে মারা যান বম্ব স্কোয়াডের এক কর্মী। এই ঘটনার জেরে এদিন ভোর থেকে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করে জেলা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ভোরের দিকে অটো চালকরা ব্যাগটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। তাতে একটি টিফিন বাক্স ছিল। পুলিশ লাগোয়া শান্তিদেবী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ ব্যাগটিকে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে রাখে। সকাল দশটা নাগাদ স্থানীয় পান ব্যবসায়ী দুলাল সাহা ব্যাগ ও টিফিন বাক্স নিজের বলে দাবি করেন। তবে তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। শিলিগুড়ি থেকে বম্ব স্কোয়াড ও রেল পুলিশ সুপারের দফতর থেকে বম্ব স্কানার আনা হয়।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া জানান, বিকাল চারটে নাগাদ প্রথম বাক্সটি স্ক্যানারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। সেই সময় আরেকটি টিফিন বাক্স মেলে। সেটিও পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, দুটিতেই বিস্ফোরক জাতীয় কিছু নেই। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে নির্দিষ্ট পোশাক করে বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা বিস্ফোরণ ঘটান। দুটিতেই খাবার ছিল।
প্রথম টিফিন বাক্সের দাবিদার পান ব্যবসায়ী দুলাল সাহা জানান, প্রতিদিন দুপুরে স্ত্রী খাবার দিয়ে যান। গত বুধবারেও ভাত ডাল আলু ভাজা দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি কিছুটা খেয়ে বাকিটা রেখে দিই। রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় টিফিন বাক্সটা দোকানের বাইরে বার করলেই নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সকালে জানতে পারি একটি টিফিন বাটিকে ঘিরে বোমাতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুলিশকে সব বলি। এ দিন সকাল থেকে দিনভর শহরে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েন। বাসিন্দারা যে মাঠে টিফিন বাক্সগুলি আনা হয়েছিল, সেখানে ভিড় করেন। বোমাতঙ্কের জেরে এলাকার শান্তিদেবী উচ্চবিদ্যালয়ে বন্ধ রাখা হয় বলে জানান স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক রঞ্জন সাহা। আলিপুরদুয়ার টাউন ব্যায়সায়ী সমিতির সম্পাদক পরিতোষ দাস বলেন, “পুজোর মরশুমে বোমাতঙ্কের জেরে এদিন বাজারে বাইরে থেকে গ্রাহকরা আসেনি। বিকাল অবধি কেনাবেচাও খুব কম ছিল।” |