নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
কংগ্রেস-তৃণমূলের লড়াইয়ের জেরে পুজোর মুখে শহরের পুর পরিষেবা কার্যত অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত, বকেয়া আদায়ের দাবিতে ট্রাক মালিকরা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেওয়ার দুদিন ধরে জঞ্জাল সাফাই না-হওয়ায় নানা এলাকায় ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছেছে। পুরসভার বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়েও বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে পুরসভার তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক, সঞ্জয় পাঠক সরেজমিনে গিয়ে ‘পে লোডার’ দিয়ে বহু এলাকা থেকে জঞ্জাল সাফাই করিয়েছেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব আন্দোলনকারী গাড়ির মালিকদের প্রশাসনের তরফে ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুরে গাড়ি চালানো শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক গোবিন্দ সরকার বলেন, “আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের টাকা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” |
শহরের জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। পুজোর আগে শহরের অচলাবস্থা কাটাতে জেলাশাসকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “অনেক আশায় মানুষ বামেদের হটিয়ে পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু নানা কৌশলে ক্ষমতায় থাকার লোভে শহরবাসীর ইচ্ছেকে গোড়া থেকেই অমর্যাদা করছে কংগ্রেস। প্রথমে বামেদের সমর্থনে বোর্ড গড়েছে। পরে তা থেকে সরে প্রায়শ্চিত্ত করেছে। ফের বামেদের সঙ্গে অলিখিত জোট গড়ে চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন মেয়র। অথচ পরিষেবা দিতে পারছেন না। একজন শিলিগুড়িবাসী হিসেবে আমিও বিরক্ত, ক্ষুব্ধ।” এর পরেই মন্ত্রীর ঘোষণা, “পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও সরকার চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে যা করণীয় করব।” শুধু তাই নয়, একাধিক দুর্নীতি ও বেআইনি কাজের অভিযোগ ওঠায় বর্তমান পুরবোর্ডকে ‘শো কজ’ করার প্রক্রিয়াও নগরোন্নয়ন দফতর শুরু করেছে বলে মন্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, “অনেক অনিয়মের অভিযোগ পৌঁছেছে নগরোন্নয়ন দফতরে।” |
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকার বলেন, “এভাবে একটি স্বশাসিত সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না মন্ত্রী। যেভাবে গাড়ি মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা করে পুরসভার কাজে ক্ষতি করতে চাইছেন তা ঠিক নয়। আমাদের বিপাকে ফেলতে চক্রান্ত করছেন তিনি।” সবদিক থেকে ব্যর্থ এই পুরবোর্ড, দ্রুত পরিস্থিতির নিষ্পত্তির দাবি করলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “একে অন্যকে দোষারোপ ছাড়া এই বোর্ডের আর কোন কাজ নেই।” যদিও পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত পাল্টা অভিযোগ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, “প্রথমে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, পরে ডেঙ্গি নিয়ে সাহায্য না মেলা, সব শেষে সাফাইয়ের গাড়ি বন্ধ করার আন্দোলন হল। সব কিছুর পেছনেই রয়েছে তৃণমূল। মন্ত্রী নিজে কাউন্সিলর পদেও রয়েছেন। পুরসভার পরিষদীয় দলনেতা। তা হলে তিনি দায় এড়াতে পারেন না।” কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘অন্তহীন চাপানউতোরে’ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শহরে বিভিন্ন জায়গায় জঞ্জাল জমে রয়েছে। তা পরিষ্কার না করে নিজেরা লড়াই করছেন।” শীঘ্রই পরিষেবার হাল ফেরাতে আন্দোলন হবে বলে জানান প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
|
পুরসভা নিষ্কর্মা। বাধ্য হয়ে প্রশাসনের মাধ্যমে ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা থেকে সাফাই সমস্ত ক্ষেত্রেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং এসজেডিএর মাধ্যমে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি।
গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী |
আমার মনে হচ্ছে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে একটা
বিষয়ে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিষয়টি হল, কে শহরবাসীকে কতটা
দুর্ভোগে ফেলতে পারে! শিলিগুড়ির মানুষ কিন্তু এ সব আর সহ্য করবেন না।”
অশোক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পুরসভা অচল করতে চান। বকেয়া টাকা মেটানোর ব্যাপারে গাড়ির মালিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। মঙ্গলবার থেকেই তাদের টাকা দেওয়ার কথা। তারা পুরসভার নিয়ম মানতে চাইছেন না।
গঙ্গোত্রী দত্ত, শিলিগুড়ির মেয়র |
এখন কাজ করলে গাড়ির ভাড়া দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সে কারণেই আমরা বৃহস্পতিরার দুপুর থেকে আবর্জনা তোলার কাজ শুরু করেছি। পুরসভার সঙ্গে আলোচনায় সমস্যা মিটেও গিয়েছিল।
গোবিন্দ সরকার, সাফাইয়ের ট্রাক মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক |
আমার ছেলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোঁজ পর্যন্ত নেননি। অথচ রোজই মন্ত্রী-মেয়রের বিবৃতি দেখছি।
শম্পা চক্রবর্তী, বধূ |
জঞ্জালের স্তূপ রাস্তায়। পথ চলা দায়। কোন শহরে বাস করছি আমরা? কাউন্সিলররা সকলে মিলে বসে সমস্যা মেটাচ্ছেন না কেন?
মান্না সাহা, ছাত্রী |
এই ধরনের প্রয়োজনীয় পরিষেবা নিয়ে রাজনীতি করাটা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে এর জন্য আমরা পুরসভাকে কর দিয়ে থাকি।
পুতুল দে, বধূ |
|