মহার্ঘ ভাতার অর্থ কই, যুব ভাতার সূচনায় আক্ষেপ মমতার
তাঁর সাধের ‘কন্যাশ্রী’ যাত্রা শুরু করেছে দু’দিন আগে। বৃহস্পতিবার, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পথ চলা শুরু করল ‘যুবশ্রী।’
স্থানও এক। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। দু’দিন আগে যেখানে স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের পড়াশোনা খাতে ‘কন্যাশ্রী’র অনুদান প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল, এ দিন সেখানেই শ’খানেক বেকার ছেলেমেয়ের হাতে ‘যুবশ্রী’র দেড় হাজার টাকার চেক দিয়ে ‘যুব উৎসাহ’ প্রকল্পটির সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম দফায় শ্রম দফতর মোট এক লক্ষ বেকারকে প্রতি মাসে ওই টাকা অনুদান হিসেবে দেবে। “এই এক লক্ষ ছেলেমেয়ের যত দিন না কর্মসংস্থান হচ্ছে, তত দিন তাঁদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে উৎসাহভাতা দেবে সরকার।”— এ দিন উদ্বোধনমঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন মমতা।
আর এর পিছনে রাজকোষ থেকে বছরে বেরোবে ৯২ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, কন্যাশ্রী খাতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন (বছরে অন্তত হাজার কোটি), তা জোগাড় করা সরকারের পক্ষে মোটেই সহজ হয়নি বলে মঙ্গলবার প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন। “অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এত টাকা কোথা থেকে আসবে? আমি বলেছি, টাকা জোগাড় করাটা আপনার ব্যাপার।”— মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সেই অমিতবাবুকেই মঞ্চে বসিয়ে বেকার ছেলেমেয়েদের ভাতা বাবদ বছরে ৯২ কোটি টাকা ব্যয়-প্রকল্পের ঘোষণা করলেন তিনি। যা শুনে প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে— কন্যাশ্রীর টাকা না হয় অর্থমন্ত্রী জোগাড় করবেন। যুবশ্রীর অর্থ সংস্থানের দায়িত্বও কি তাঁর?
অর্থমন্ত্রী অবশ্য এ দিন এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। মুখ্যমন্ত্রীও খোলসা করে বলেননি, দায়িত্বটা ঠিক কার। তবে মমতা এ দিনও কোষাগারে টানাটানির কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, “আগের সরকার যত ঋণ করেছিল, তা শুধতেই রাজস্বের অর্ধেক চলে যাচ্ছে! ২০১২-১৩-য় আমরা ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি আয় করলেও ওই বছরে ২১ হাজার কোটি, আর চলতি অর্থবর্ষে ২৪ হাজার কোটি কেটে নেবে কেন্দ্র। শুনছি, আগামী বছরেও ওরা ২৮ হাজার কোটি টাকা কেটে নেবে!”

যুবশ্রীর উদ্বোধনে টলিউড তারকাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এমতাবস্থায় সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা জোগানো কার্যত সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আক্ষেপ, “আমার তো দিতে আপত্তি নেই! কিন্তু কোথা থেকে দেব? নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা! রোজই ভাবতে হচ্ছে, মাইনে দেব কী ভাবে?” তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এ জন্য বেকারদের ভাতা দেওয়া আটকাবে না। “কেউ কেউ বলছে, বেকার ভাতা কেন? আরে, এ তো হাতখরচ! সামান্য সাহায্য!”— মন্তব্য মমতার।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, সরকারের দেওয়া এই ‘হাতখরচের’ টাকায় বেকার যুবক-যুবতীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। ওঁদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “সরকারি চাকরিতে গ্রুপ-ডি পদে মাইনে ছ’-সাত হাজার। গ্রুপ-সি’তে বড়জোড় দশ-বারো। কিন্তু তার জন্য দৌড়বেন না। ঘরে বসে হাতের কাজ করে এর চেয়েও বেশি উপার্জন করা যায়।” মমতার মতে, “কাজ কাউকে ডাকবে না। নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে।” এ হেন অভিমতের পিছনে নিজস্ব যুক্তিও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি “আমি ক’জনকে চাকরি দিতে পারব? চাকরি দিতে গেলে তো অর্থের দরকার।”
এই পরিস্থিতিতে বেকার ছেলেমেয়েরা যাতে দোকান খুলে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন, সে ব্যাপারে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরির ব্যাখ্যা দিয়ে যিনি জানিয়েছেন, “আমরা জমি-মানচিত্র, জমি ব্যবহারের নীতি তৈরির পাশাপাশি জমি-ব্যাঙ্ক ও বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক তৈরি করেছি। তখন থেকেই এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা ছিল। বেসরকারি সংস্থাও এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে লোক নেবে। শিক্ষক-চিকিৎসক-ইঞ্জিনিয়ার দরকার হলে আমরা এখান থেকেই লোক নেব।” মুখ্যমন্ত্রীর এ-ও দাবি, পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি ‘কোল ব্লক’ থেকে কয়লা তোলা হবে, সেখানে চাকরি হবে লাখখানেক। পাশাপাশি ডিভিসি এবং সেল রাজ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করছে বলে জানিয়ে মমতা দাবি করেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ১৬টি শিল্প করেছিলেন। তার বারোটির নির্মাণকাজ শেষের মুখে। সেখানেও বহু চাকরির সুযোগ রয়েছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পেও বহু কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও এ দিন শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।
তবু যদি ছেলেমেয়েদের মনে হতাশা আসে?
মোকাবিলার উপায় বাতলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাওয়াই, “হতাশা জীবনের শত্রু। মন খারাপ হলে পাখি দেখুন। সবুজ দেখুন। বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করুন। গান শুনুন। এমনকী, কোথাও ঘুরেও আসতে পারেন। কিন্তু হতাশাকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।”
পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলে বেকার ভাতা চালু ছিল। পেতেন শুধু বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকেরা। ১৯৮৮-তে চালু হওয়া ওই ভাতার অঙ্ক প্রথমে ছিল মাসে ৫০০ টাকা, পরে বাড়িয়ে করা হয় দেড় হাজার। রাজ্যে ক্ষমতায় পালাবদলের পরে সেটিতে অবশ্য দাঁড়ি পড়েনি। সরকারি হিসেব বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ১৯ হাজার ৩৯৩ জনকে বেকার ভাতা বাবদ প্রায় ৩৪ কোটি টাকা দিয়েছে শ্রম দফতর। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য ‘যুবশ্রী’কে ওই ‘বেকার ভাতা’র সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পক্ষপাতী নন। বরং তাঁর মতে, “এটা হতাশা ভেঙে জীবন গড়ার প্রকল্প।”
যুবশ্রীর অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম দফতর বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে। যেমন, প্রার্থীকে কর্মহীন হতে হবে। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ। এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করানোর সময়ে প্রার্থীকে মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে, তিনি কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা নেননি। “উপরন্তু ভাতা পাওয়া শুরু হলে প্রতি ছ’মাস অন্তর তাঁকে লিখিত ভাবে সরকারের কাছে জানাতে হবে যে, তিনি বেকার-ই আছেন”, বলেন এক শ্রম-কর্তা। কিন্তু এই ‘স্ব-ঘোষণার’ সত্যতা পরখ করবে কে? শ্রম দফতরের সেই পরিকাঠামো আছে?
সরাসরি জবাব এড়িয়ে কর্তাটি বলেন, “সরকারের টাকা নিলে ভয় তো একটা থাকবেই!”
সেটাই নজরদারির শেষ কথা কি না, তার সদুত্তর প্রশাসনের তরফে মেলেনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.