পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে যে-জট তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে প্রয়োজনে কঠোর মনোভাব নেবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মহাকরণে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারের বক্তব্য, রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রকল্পকে ঘিরে যে-মুষ্টিমেয় লোক আন্দোলনের নামে নির্মাণকাজে বাধা দিচ্ছে, তারা জমিহারাদের কেউ নয়। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই তারা নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে জটিলতা তৈরির চেষ্টা করছে। সরকার তাই কোনও নরম মনোভাব দেখাবে না বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কাটাতে ৯ অক্টোবর জেলাশাসকের দফতরে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে জেলাশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ), ডিভিসি-র পদস্থ আধিকারিকেরা এবং বিক্ষুব্ধ জমি-মালিকদের সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা।
ওই বৈঠকের আগেই রঘুনাথপুরে ওই প্রকল্প এলাকার সমস্যা বোঝার জন্য এ দিন ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে বৈঠকে ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনের নামে ওই প্রকল্প তৈরিতে কারা বাধা দিচ্ছে, বৈঠকে বসার আগেই তার সবিস্তার রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
আন্দোলনের ফলে বেশ কিছু দিন ডিভিসি-র ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ বন্ধ ছিল। বিক্ষোভকারীদের দাবি, বর্তমান বাজারদরে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রকল্প এলাকায় ফের কাজ শুরু হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-মিছিল চলছেই। ২৩ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই তিনি জেলা প্রশাসনকে আলোচনার পথে রঘুনাথপুরের সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মমতার সেই নির্দেশ মেনেই ৯ অক্টোবর বৈঠক ডেকেছে জেলা প্রশাসন।
তবে মহাকরণের দাবি, রাজ্যের জমি-নীতির সঙ্গে ডিভিসি-র প্রকল্পের কোনও বিরোধ নেই। কারণ, রঘুনাথপুরে মানুষ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণও নিয়েছেন তাঁরা। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ডিভিসি-র হাতে রয়েছে। তাই মুষ্টিমেয় আন্দোলনকারীর পাশে থাকবে না সরকার। বরং প্রশাসনিক দিক থেকে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষকে সব রকম সাহায্য করা হবে। এ দিন সরকারের পক্ষ থেকে তেমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে।
স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে খুশি ডিভিসি-প্রধান। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তিনি। চেয়ারম্যান শুধু বলেছেন, “সরকার আমাদের পাশে থাকছে। এটুকু আশ্বাসই যথেষ্ট।” ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ২৫২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ঘিরে তাঁদের ১৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করার কথা। তার মধ্যে কয়েকশো কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে আন্দোলনের জেরে যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না-পারলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে যাবে বলে সংস্থার আশঙ্কা। |