ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প
তিন দিনের শিবিরে চেক নিলেন তিন জন
নিচ্ছুকের সংখ্যা প্রায় আটশো। তাঁদের জন্যই শিবির করে চেক বিলির কর্মসূচি নিয়েছিল প্রশাসন। অথচ তিন দিনে মাত্র তিন জন ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন। ফলে, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’ নিয়ে জট বহাল রইল। আর এই জটের কারণে উৎপাদন শুরুর মুখে এসেও ২৫২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ঘিরে সংশয়ও কাটল না।
এই অবস্থায়, পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকের উপস্থিতিতে পুলিশ মোতায়েন করে ‘ওয়াটার করিডর’-এর (প্রকল্পে জল নিয়ে আসার পাইপলাইন) কাজ করাতে চাইছে জেলা প্রশাসন। অনিচ্ছুক জমি মালিকেরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, জোর করে কাজ হলে আন্দোলনও জোরদার হবে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোও জানিয়েছেন, কোনও বাধা এলে জোর করে কাজ করা হবে না। খোদ মন্ত্রীই এ কথা বলায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকছে।
এই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার (হেড অফ দ্য প্রজেক্ট) দেবাশিস মিত্র বলেছেন, “এটি জাতীয় প্রকল্প। উৎপাদিত বিদ্যুতের একাংশ রাজ্য সরকারও পাবে। মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়ক বা এলাকাবাসীসকলেই চাইছেন প্রকল্প হোক। ফলে, ওয়াটার করিডরের যে পরিমাণ জমির দখল আমাদের হাতে রয়েছে, সেখানেই আপাতত কাজ শুরু করব। প্রশাসন আমাদের সে ভাবেই সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে।” তাতে কি আসল উদ্দেশ্য সফল হবে? কারণ, ডিভিসি-রই একাধিক আধিকারিক বলছেন, শেষ অবধি পুরো পাইপলাইন পাতা না গেলে জল আসবে না। ফলে, উৎপাদনই শুরু করা যাবে না!
রায়বাঁধ পঞ্চায়েত দফতরে ফাঁকা চেক বিলির শিবির। ছবি: সুজিত মাহাতো।
রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ২৫০০ একর জমিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে ডিভিসি। বিনিয়োগ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। নানা সমস্যায় লক্ষ্যমাত্রার তিন বছর পরেও উৎপাদন শুরু করতে ব্যর্থ ডিভিসি। সম্প্রতি একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরুর অবস্থা তৈরি হয়েছে। গোল বেধেছে ‘ওয়াটার করিডর’ নিয়ে। এর জন্য জমি লাগবে ৫১ একর। জমি মালিকের সংখ্যা প্রায় ১৬০০। প্রায় আটশো জন স্থায়ী চাকরির দাবি তুলে ক্ষতিপূরনের চেক নিতে অস্বীকার করেছেন। ‘জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি গড়ে’ আন্দোলনও করছেন তাঁরা।
প্রশাসনের সঙ্গে ডিভিসি-র বৈঠকে ঠিক হয়, নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ পঞ্চায়েত অফিসে শিবির করে চেক বিলি হবে। রায়বাঁধ মৌজায় মোট জমি মালিকের সংখ্যা ৪৭৮। এখনও চেক নেননি ৩১৮ জন। এ দিন পঞ্চায়েতে অফিসের বাইরেই বসে থাকা অনিচ্ছুক জমি মালিক সাগর মণ্ডল, তারাপদ মাহাতো, খগেন মণ্ডলরা বললেন, “আমরাও চাই শিল্প হোক। কিন্তু, আগে ডিভিসি ও প্রশাসনকে আমাদের দাবি মেটাতে হবে।”
ডিভিসি এবং প্রশাসনের বৈঠকে স্থির হয়েছিল, বাধা এলে পুলিশ মোতায়েন করে (প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি করে) পাইপলাইন পাতা হবে। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, “এই প্রকল্প ঘিরে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। ডিভিসি বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলিও প্রকল্প নিয়ে সহমত পোষণ করেছে। এই অবস্থায় পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা হবে না।” ‘জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র নেতা নিখিল মণ্ডলের অবশ্য হুঁশিয়ারি, “প্রশাসন জোর করে কাজ করলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামব।” কিন্তু ডিভিসি-র কাজে সক্রিয় বাধা দান না কি ব্লক অফিসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান-বিক্ষোভকোন পথে আন্দোলন হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন কমিটির নেতারাই।
মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর কথায়, “পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার মতো জেলায় ভারী শিল্প গড়ে তোলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি। দলগতভাবে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের বোঝানোর কাজ চলছে।” কিন্তু, অনিচ্ছুকদের জমিতে জোর করে কাজ না করাও তো দলের ঘোষিত নীতি! তা হলে রঘুনাথপুরে কী করে পুলিশ দিয়ে কাজ হবে? মন্ত্রীর বক্তব্য, “প্রশাসন কাজ শুরু করার পরে যদি কেউ সক্রিয়ভাবে বাধা না দেয়, তাহলে বোঝাই যাবে জমি মালিকরা চাইছেন প্রকল্প হোক। কিন্তু, বাধা এলে জোর করে কাজ করা হবে না।” জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, “আর যাই হোক আমরা লোবা-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি চাই না!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.