প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র ‘ওয়াটার করিডর’-এর বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ শুরু করা হবে। অনিচ্ছুক জমি মালিকেরা কাজে বাধা দিলে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। ডিভিসি-র বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে তৈরি হওয়া অনশ্চিয়তা কাটাতে প্রশাসনিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস, রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার চিন্ময় চৌধুরী এবং পুলিশ, প্রশাসন, ডিভিসির আরও পদস্থ কর্তা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উন্নয়নের স্বার্থে ওই ‘ওয়াটার করিডর’-এর জন্য প্রয়োজনে এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি করে কাজ শুরু করা হতে পারে।
রঘুনাথপুরে তাদের মেগা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দশ কিলোমটার দীর্ঘ ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরিতে নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ এলাকায় ৫১ একর জমি লাগবে। জমি মালিকের সংখ্যা প্রায় ১৬০০। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ চেক নিয়েছেন। ৪৭ একর জমি প্রশাসন ইতিমধ্যেই ডিভিসিকে হস্তান্তর করে দিয়েছে। কিন্তু, চেক না নেওয়া বাকি অর্ধেক জমি মালিক ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে জমির পরিবর্তে পরিবার পিছু স্থায়ী চাকরির দাবি তুলেছে। সংস্থার নিয়মেই ডিভিসি-র পক্ষে ওই দাবি মানা সম্ভব নয়। এই জটে জল সরবরাহের পাইপলাইন বসানোর কাজ থমকে রয়েছে। এমনিতেই উৎপাদন শুরুর নির্ধারিত সময় থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে প্রকল্পটি। বর্তমানে একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি। কিন্তু, জল সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় উৎপাদনও শুরু করা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, ডিভিসি-র এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের একাংশ এ রাজ্যেরও পাওয়ার কথা।
আগে দু’বার জমি মালিকদের নিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠক হলেও জট পুরোপরি না কাটায় মঙ্গলবার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ডিভিসি কর্তারা। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে ডিভিসি জানায়, ইতিমধ্যেই প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই অবস্থায় ‘ওয়াটার করিডর’ নির্মাণে প্রশাসন সক্রিয় সহযোগিতা করুক। এর আগে ছাই পুকুর (অ্যাশপন্ড) এবং সীমানা প্রাচীর তৈরির সময়েও একই ধরনের সমস্যা হওয়ায় ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট পর্যায়ের এক আধিকারিকের উপস্থিতিতে পুলিশ মোতায়েন করে কাজ করার নজির রয়েছে।
ওই সূত্র ধরেই এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকের উপস্থিতিতে পুলিশ মোতায়েন করে কাজ শুরু করা হবে। আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। স্থির হয়েছে ২৬ অগস্ট থেকে রায়বাঁধ এলাকায় ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরির কাজ শুরু হবে। তার আগে মাইকে প্রচার করে যাঁরা এখনও জমির দাম বাবদ চেক নেননি, তাঁদের তা নেওয়ার আবেদন জানানো হবে। ২০-২৩ অগস্ট রায়বাঁধ পঞ্চায়েতে শিবির করে চেক বিলি করা হবে।
মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাসের কথায়, “ডিভিসি-র এই প্রকল্পের জন্য এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। ওয়াটার করিডর তৈরি থেকে পিছিয়ে আসার কোনও সুযোগ নেই।” তাঁর সেংযাজন “আগের দু’বারের বৈঠকে জমি মালিকদের বেশির ভাগই কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তা ছাড়া, ডিভিসি-র ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলিও প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছে। কিছু লোক ব্যক্তিগত স্বার্থে অহেতুক বিরোধিতা করলেও কাজ করতে ডিভিসি-কে সব রকম প্রশাসনিক সাহায্য করা হবে।” এসডিপিএ কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন “সরকারি কাজে বাধা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যদিও এ দিন সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক সুধীর মণ্ডল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যাঁরা চেক নেবেন না, তাঁদের জমিতে জোর করে কাজ করা হলে আমরা আন্দোলনে নামব।” তবে, ঘটনা হল, কাজে সক্রিয় বিরোধিতা করে না কি অন্য উপায়ে আন্দোলন, সেই বিষয়ে এখনও দ্বিধাগ্রস্ত কমিটি। |