আলোচনায় জট কিছুটা কাটলেও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে নিজেদের তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পে জল সরবরাহ নিয়ে পুরোপুরি দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারল না ডিভিসি। তবে, মঙ্গলবার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রকল্প কার্যালয়ে হওয়া বৈঠকে স্থায়ী চাকরির দাবিতে অনড় থাকা জমি-মালিকদের মধ্যে দ্বিমত লক্ষ করা গিয়েছে। আপাতত এটাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির পক্ষে আশার কথা।
বৈঠকে উপস্থিত প্রায় একশো জন জমি-মালিকদের একাংশ স্থায়ী চাকরি না হলে জমি দেবেন না বলে জানিয়েছেন। অন্য অংশ আবার বলেছেন, স্থায়ী চাকরির পরিবর্তে অন্যান্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা জমিহারাদের দেওয়ার কথা বলছে ডিভিসি, সেই বিষয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে কাজ শুরু হোক। বৈঠকে উপস্থিত রঘুনাথপুরের ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট জিগীষেন্দ্র সিংহ বলেন, “জমি-মালিকদের একাংশ ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও অন্য অংশ স্থায়ী চাকরির প্রশ্নে অনড়। আমরা পরে ডিভিসিকে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করে ওয়াটার করিডর তৈরির কাজ কী ভাবে করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” সেই সিদ্ধান্ত নিতেই ১৩ অগস্ট রঘুনাথপুরে এসডিও অফিসে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ডিভিসি।
রঘুনাথপুরে তাদের মেগা তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য দশ কিলোমটার দীর্ঘ ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরিতে নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ এলাকায় ৫১ একর জমি লাগবে। জমি মালিকের সংখ্যা প্রায় ১৬০০। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ চেক নিয়েছেন। ৪৭ একর জমি প্রশাসন ইতিমধ্যেই ডিভিসিকে হস্তান্তর করে দিয়েছে। কিন্তু, চেক না নেওয়া বাকি অর্ধেক জমি মালিক ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে জমির পরিবর্তে পরিবার পিছু স্থায়ী চাকরির দাবি তুলেছে। সংস্থার নিয়মেই ডিভিসি-র পক্ষে ওই দাবি মানা সম্ভব নয়। এই জটে জল সরবরাহের পাইপলাইন বসানোর কাজ থমকে রয়েছে। এমনিতেই উত্পাদন শুরুর নির্ধারিত সময় থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে প্রকল্পটি। বর্তমানে একটি ইউনিট বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য তৈরি। কিন্তু, জল সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় উত্পাদনও শুরু করা যাচ্ছে না।
গত ২৫ জুলাই ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার ডিভিসি-র বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি কমিটির সদস্যেরাই অনুপস্থিত থাকায়। তবে, মঙ্গলবার তাঁরা বৈঠকে এসেছিলেন। এ দিন বৈঠকে ডিভিসি-র আধিকারিকেরা কমিটির সদস্যদের জানান, ‘ওয়াটার করিডর’ নির্মাণে সেখানকার জমিহারা পরিবারের লোকজনই ঠিকা শ্রমিকের কাজ করবেন। ডিভিসি-র আরও আশ্বাস, এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হলে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। তখনও কাজ পাবেন জমিহারারা। তা ছাড়া, সমবায় সমিতি গঠন করে প্রকল্পে ঠিকাদারির কাজও কমিটির সদস্যেরা করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। আর এই প্রেক্ষিতেই জমি মালিকদের একাংশ আলোচনায় ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে ডিভিসি-র দাবি। ‘জমি রক্ষা কংগ্রাম কমিটি’র সম্পাদক সুধীর মণ্ডলও বলেন, “এ দিন আলোচনায় ডিভিসি কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা ওদের জানিয়েছি, ত্রিপক্ষিক চুক্তি করেই তারা কাজ শুরু করতে পারবে।” প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “ওই কমিটি তাদের সঙ্গে যত জমি-মালিক রয়েছেন বলে দাবি করছিল, প্রকৃত সংখ্যা যে তার চেয়ে কম, এ দিনের বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বৈঠকে আমাদের বক্তব্য শুনে বড় অংশের জমি মালিক যে ভাবে প্রকাশ্যেই ওয়াটার করিডর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, সেটাও বড় কথা।”
কমিটির সহ-সভাপতি নিখিল মণ্ডল কিন্তু বৈঠকের শেষে বলেছেন, “এ দিন আমরা স্থায়ী চাকরির দাবি জানালেও ডিভিসি সেই বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, চাকরি না পেলে জমি দেব না।” ডিভিসি-র এক পদস্থ কর্তা আবার বলছেন, “কোনও ক্ষেত্রে সমস্ত জমি মালিক সম্মত হয়েছেন, এমন নজির নেই। সামান্য কিছু বিরোধিতা থাকেই। সেটা এড়িয়েই কাজ করতে হয়।” |